এ যেন আক্ষরিক অর্থেই খ্যাতির বিড়ম্বনা। বা বলা ভাল ‘লাইকের’ বিড়ম্বনা।
আর সে বিড়ম্বনা ঠেকাতেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেসবুকে নতুন ‘প্রোগ্রাম’ আনতে চলেছেন কর্তৃপক্ষ। যদিও এর ফলে তাদের আর্থিক লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। তবে তাতে দমছেন না ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। বরং তাঁদের বিশ্বাস ফেসবুকের ‘আসল’ ব্যবহারকারীদের কাছে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এটিই উপযুক্ত পদক্ষেপ।
কিন্তু হঠাৎ কী এমন সমস্যা দেখা দিল ফেসবুকের জনপ্রিয় ‘লাইক’ বোতামটি নিয়ে?
আসলে ফেসবুক বেশ অনেক দিন ধরেই ব্যবসায়ীদের কাছে পছন্দের বিজ্ঞাপন-মাধ্যম। পোশাক-পরিচ্ছদ কিংবা গয়না প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের মোবাইল ফোন সংস্থা সব জিনিসেরই নামী ‘ব্র্যান্ড’গুলি তাদের বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করে ফেসবুককে। শুধু বিজ্ঞাপন নয়, কোন ব্র্যান্ড ঠিক কতটা জনপ্রিয়, তারও একটা হিসেব পাওয়া যায় এখান থেকে। সাধারণ ধারণা অনুযায়ী, যে ব্র্যান্ডে যত বেশি সংখ্যক ‘লাইক’ পড়ে, সেই ব্র্যান্ড ততটাই জনপ্রিয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটিও এক ধরনের পরোক্ষ বিজ্ঞাপন। আরও বেশি সংখ্যক ব্যবহারকারীর নজর কাড়তে ফেসবুকে নিজেদের জনপ্রিয়তম ব্র্যান্ড হিসেবে দেখাতে এক মাত্র ভরসা ওই ‘লাইক’ বোতামটিই। এ বার গোল বেধেছে তাকে ঘিরেই।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষের দাবি, বিজ্ঞাপনের জন্য ‘লাইক’ বোতামটির অসাধু ব্যবহার করছে কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। নানা রকম ‘ভুয়ো’ উপায়ে তারা তাদের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করছে ফেসবুকে। যেমন ‘স্প্যাম’-এর মতো প্রোগ্রামের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা নিজেদের অজান্তেই কোনও একটি বিশেষ ব্র্যান্ডের জন্য ‘লাইক’ বোতাম টিপে ফেলছেন। তাঁরা হয়তো কোনও ভিডিও ফুটেজ দেখতে মাউসে ‘ক্লিক’ করলেন। সঙ্গে সঙ্গেই ‘লাইক’ পড়ে গেল কোনও বিশেষ ব্র্যান্ডের পেজে।
ব্যবহারকারীর অজান্তেই। অনেক সময় আবার ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে একই ব্যক্তিকে দিয়ে একাধিক বার ‘লাইক’ করানো হচ্ছে কোনও নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডকে। তাতেই বেড়ে যাচ্ছে ‘লাইকের’ সংখ্যা। বাড়ছে ভুয়ো জনপ্রিয়তা।
এই অসাধু ব্যবহার রুখতেই এ বার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। নিজেদের ব্লগে তারা জানিয়ে দিয়েছেন, “উন্নত নতুন স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির মাধ্যমে এই ধরনের ভুয়ো বা সন্দেহজনক লাইক মুছে ফেলা সম্ভব হবে ফেসবুক থেকে।” তাঁরা জানেন, হয়তো এর ফলে গড়ে প্রায় এক শতাংশ ‘এনডোর্সমেন্ট’ হারাতে পারে ফেসবুক। কিন্তু সংস্থাও অন্তত সাড়ে ন’কোটি ব্যবহারকারী দু’পক্ষের সুবিধার জন্য এটিকেই যথাযথ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন তাঁরা।