সেই সালমান শাহের সময়ের কথা। সে সময় শাবনূরের উপস্থিতি এবং অভিনয় মানেই ছিল ভিন্ন কিছু। তার গাছে চড়া, নদীতে ঝাঁপ দেয়া, ধান ক্ষেতের সরু রাস্তা ধরে নেচে যাওয়া। আবার শহুরে ন্যাকা অথবা জীবন যুদ্ধে সংগ্রামরত একজন নারী। অর্থাৎ, সালমানের সঙ্গে শাবনূরের উপস্থিতি মানেই ছিল দর্শকের ভাল লাগা। অকস্মাৎ চিরবিদায় নিলেন সালমান। নানা চেষ্টায় সালমান পরবর্তী জুটি হিসেবে শাবনূর নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন রিয়াজ, শাকিল খান, মান্না, ফেরদৌস, আমিন খানের সঙ্গে। সেখানেও শাবনূর নিজেকে মেলে ধরেছেন দর্শকের সামনে। এদের প্রায় প্রত্যেকের সঙ্গেই জুটি হিসেবে সফল হয়েছেন এ নায়িকা। এতে ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকেন তিনি।
প্রযোজক পরিচালকদের কাছে একসময় পরিষ্কার হয়ে উঠে যে, শাবনুর মানেই দেরি করে সেটে উপস্থিত হওয়া আর পরিচালক-প্রযোজকদের ভোগান্তি ডেকে আনা। তারপরও অন্য সব নায়িকাকে পিছনে ফেলে চলার প্রতিযোগিতায় শীর্ষে থাকা তারকা নায়িকার কাছেই সবাই ভিড় জমান। কিন্তু কপাল যেন মন্দ হতে থাকে শাবনুরের। তার জুটির নায়ক রিয়াজ-ফেরদৌস-আমিন খান-অমিত হাসানকে নিয়ে ছবি নির্মাণ করতে ইচ্ছুক নন বেশির ভাগ প্রযোজক। পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন মান্না। ডিপজলের সঙ্গে অভিনয়ের একাধিক প্রস্তাব এলেও ডিপজলের নায়িকা হয়ে অভিনয়ে শাবনূরের ইচ্ছা কম। এদিকে শাকিব খান তার সঙ্গে বা তিনি শাকিব খানের সঙ্গে মানানসই নন। তার ওপর আবার দু’জনার টাইমিং এবং শিডিউল জটিলতা একটি বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সবকিছু নিয়ে শাবনুর হতাশ হয়ে পড়েন। এসময় নানা কিছু পরিকল্পনা বা চিন্তা করতে করতেই শাবনুর মুটিয়ে যান। পরিচালক-প্রযোজকরা তাকে নিয়ে আশা ছেড়ে দিতে থাকেন। হাতে গোনা কয়েকজন পরিচালক শাবনুরকে মূল চরিত্রে রেখে সঙ্গে জুটি বা ভাই হিসেবে ইমন, আমান, নীরবকে নিয়ে কয়েকটি ছবি নির্মাণ করেন।
এ প্রসঙ্গে ছবিতে অভিয়ের সময়ে শাবনুর বলেছিলেন, নতুনদের প্রতি আমার এমনিতেই সুদৃষ্টি রয়েছে। বিশ বছর ধরে একের পর এক নতুনের সঙ্গেই নিজেকে মানিয়ে নিয়ে পথ চলছি। আজকের শাকিব খান যখন নতুন তখন তার সঙ্গে একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছি। তবে অনেকটা কষ্ট নিয়েই পুরনোকে ছেড়ে নতুনদের সঙ্গে জুটি গড়তে হয়। তবে আমার সঙ্গে জুটি গড়া যে কোন নতুনের পক্ষে এখন খুব কষ্টের। তারপরও নতুনরা চেষ্টা করে চলছে-এটাই আমার কাছে অনেক। নতুন নায়কের সঙ্গে শাবনুর জুটির সবশেষ ছবি মুক্তি পেয়েছে ‘ভালোবাসা সেন্টমার্টিন’। শহিদুল ইসলাম খোকনের পরিচালনায় এ ছবিতে শাবনুরের নায়ক ছিলেন রাশেদ মোর্শেদ। এ ছবিটি দর্শক গ্রহণ করেনি।
ইমনের সঙ্গে শাবনুর জুটির দুটি ছবি মুক্তি অপেক্ষায় আছে। এর একটি মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের পরিচালনায় ‘এমনওতো প্রেম হয়’ এবং অন্যটি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর পরিচালনায় ‘অবুঝ ভালোবাসা’। এ দুটি ছবিও অনেকদিন ধরে মুক্তি অপেক্ষায় আছে। এছাড়া এমএম সরকারের ‘পাগল মানুষ’ ছবিতে শাবনুর অভিনয় শুরু করার অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই পরিচালক মারা যান। এদিকে পাঁচ বছর আগে শুটিং করা ছবি শাবনুর-রিয়াজ জুটির ‘শিরি ফরহাদ’ সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে সমপ্রতি। গাজী মাহবুবের পরিচালনায় ছবিটির মুক্তির তারিখ এখনও চূড়ান্ত নয়। সব মিলিয়ে শাবনূরের কপালে যেন মন্দটাই ভর করছে ক্রমশ। এরইমধ্যে বেশ ক’জন নতুন চলচ্চিত্র পরিচালক শাবনূরকেন্দ্রিক কয়েকটি ছবি নির্মাণ করার পরিকল্পনা করতে চাইলেও তাকে না পাওয়া বা তাকে খুঁজে পেতে কষ্ট হওয়ায় সেসব পরিকল্পনাতেই থেকে যাচ্ছে। নতুনরাই যে কোন জাতির জন্য সৌভাগ্যের বার্তা বয়ে আনে। হয়তো নতুন এ পরিচাকদের হাত ধরেই পার্শ্ববর্তী দেশের মাধুরী বা শ্রীদেবীদের মতো প্রত্যাবর্তন ঘটতে পারতো শাবনূরের। কিন্তু সে পথ শাবনূর নিজেই বন্ধ করে দিচ্ছেন ক্রমশ।