দেড়শ কোটি মুসলমানের বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে স্থায়ী ও টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় বলে মত প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) ২৬তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, “পৃথিবীতে স্থায়ী শান্তি এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে দেড়শ কোটি মুসলমানের জীবনপ্রণালী এবং তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে।” “এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাদদিয়ে কোনো স্থায়ী ও টেকসইশান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়”, বলেন শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ক্যাম্পাসে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওআইসিভুক্ত ৫৭টি দেশের মধ্যে গভীর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের ফলে গোটা বিশ্ব, বিশেষ করে উন্নত বিশ্ব আজবুঝতে পেরেছে যে, মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে সম্পর্ক স্থাপন অত্যন্ত জরুরি। ওআইসিভুক্ত দেশগুলো এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে গভীর ভ্রাতৃত্ব ও সহযোগিতার বন্ধনে আবদ্ধ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘দশ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা’ বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে নেয়ায় বাংলাদেশের সরকার প্রধান ওআইসি মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী সকালে গেইট অব ফাইভ ফান্ডামেন্টালস দিয়ে আইইউটি ক্যাম্পসে প্রবেশ করেন। সকাল ১০টার কিছু পরে তিনি সদ্য স্নাতকদের শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে মিলনায়তনে যান। প্রশাসনিক ভবন থেকে শুরু হয়ে সেন্ট্রোল প্লাজা হয়েমূল মিলনায়তনে আসে এই শোভাযাত্রা। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর স্নাতক ও তাদের অভিভাবকদের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির মেকানিক্যাল ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ও ইনভায়র্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেকনিক্যাল ও ভোকেশনালে ব্যচেলর, মাস্টার্স ও ডিপ্লোমাপ্রাপ্তদের নিয়েএই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ওআইসি স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত কে এ এস এম এহতেশামুল হক, মেকানিক্যাল ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আইইউটি স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত শফি নূর, কম্পিউটার সায়েন্স ওইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আইইউটি স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত জাহিদ ফাররাজ আহমেদ, সিভিল ও ইনভায়র্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আইইউটি স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত মো. মোসাব্বির পাশা এবং টেকনিক্যাল ও ভোকেশনালে আইইউটি স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত উগান্ডার তাবান হাবিবকে পদক পরিয়ে দেন। স্নাতকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তোমাদের জন্য আমার উপদেশহলো- যখনই কোনো সমস্যার সম্মুখীন হবে, হাল ছেড়ে দেবে না। চেষ্টা চালিয়ে যাবে। বিরামহীন চেষ্টা এবং একাগ্রতা অবশ্যই সাফল্য বয়ে নিয়ে আসবে।” পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর বিশ্ব গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিশ্ব শান্তি এবং সম্প্রীতি অর্জনের জন্য আমাদের অন্যতম কর্তব্য হচ্ছে অন্যের প্রয়োজনের প্রতি দৃষ্টি দেয়া এবং ন্যায়-বিচার ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমঝোতা ও স্বার্থ ত্যাগ করার মানসিকতা গড়ে তোলা।” বিশ্বায়ন এবং তথ্য প্রযুক্তির সহজলভ্যতার ফলে সবকিছু দ্রুত বদলে যাচ্ছে এবং সম্পর্কের দূরত্ব কমে আসছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তবে প্রতিটি পরিবর্তনই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের জন্ম দিচ্ছে, যেগুলো চিহ্নিত এবং সংজ্ঞার্য়িত করা কঠিন।” “তবে প্রতিটি দেশ তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে এ সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টা করছে”, যোগ করেন শেখ হাসিনা। পরিবর্তনের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতিসংঘের ৬৫তম অধিবেশনে ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’ মডেল উপস্থাপনের কথাও সমাবর্তনে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এর মূল কথা হচ্ছে বিশ্বের সকল মানুষের সম্প্রীতির সাথে বসবাস এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা।” “এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য আমি আপনাদের সকলের সমর্থন চাই”, বলেন প্রধানমন্ত্রী । বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭৪ সালে ওআইসির সদস্যপদলাভের বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “যখনই আমি আইইউটির এই সুন্দর ক্যাম্পাসে আসি, তখনই প্রথমে আমার নজরে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল প্রবেশদ্বারের দিকে। এটি আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমানকে।” ওআইসি নিয়ে পিতার স্বপ্নের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বাস করতেন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ওআইসি ও সদস্যদেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। “মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর যোগাযোগ স্থাপনের যে প্রক্রিয়া বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন,তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি স্থাপিত হয়”, বলেন শেখ হাসিনা। দুই বছর আগে নারী শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি অনুমোদন দেয়ায় আইইউটির পরিচালনা পর্ষদকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। তবে মহিলা হোস্টেল নির্মিত না হওয়ায়এখনও ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত না হওয়ার বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমিআশা করি, মহিলাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সামনের সমাবর্তন আরো বর্ণিল হবে।” গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদেরউদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ থেকে তোমাদের দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল। তোমাদের কঠোর পরিশ্রম করেবাস্তব ক্ষেত্রে সব ধরনেরচ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। বিজ্ঞানী এবং কারিগরি বিশেষজ্ঞ হিসেবে তোমাদের সমসাময়িক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উপায় বের করতে হবে।”