দেশ ভালো চলছে না দাবি করে এই অবস্থা থেকে উত্তরণে ঐক্যের কথা বলেছেন গণফোরাম সভাপতি ড.কামাল হোসেন ও বিকল্পধারাসভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। রোববার র‌্যাডিসন হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দুই প্রধান রাজনৈতিক দল থেকে বেরিয়ে আসা এই দুই নেতা ঐক্যের কথা বললেও কীসের ভিত্তিতে, কাদের নিয়ে ঐক্য, তাদের বক্তব্যে তা স্পষ্ট হয়নি।

এমনকি গণফোরামে ও বিকল্পধারার মধ্যে ঐক্য হবে কি না- তাও স্পষ্ট হয়নি অনুষ্ঠানে, যে অনুষ্ঠানের জন্য পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তির শিরোনাম ছিল ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা’।

অনুষ্ঠানে গণফোরাম সভাপতি ও বিকল্পধারা সভাপতি তাদের বক্তব্য রাখেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরও দেন তারা। দুই নেতার বক্তব্য ও প্রশ্নোত্তর পর্বের মধ্যে সৈয়দ আবুল মকসুদ, জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ কয়েকজন বক্তব্য রাখেন। ড. কামাল বলেন, “আমাদের রাজনীতি ও শাসন ব্যবস্থায়রোগ ঢুকেছে। যত গুরুতর রোগই হোক, তার চিকিৎসা সম্ভব।” “বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সেই শক্তি আছে। এ শক্তি হচ্ছে রাজনৈতিক ঐক্য। আসুন, আমরা সবাই মিলে ঐক্য গড়ে তুলে রুগ্নরাজনীতিকে সুস্থ করে তুলি।” বি চৌধুরীও বলেন, “লোভী রাজনীতিবিদ, কিছু লোভী ব্যবসায়ী ও কিছু লোভী আমলা দেশটাকে উপরে উঠতে দিচ্ছে না। এর বিরুদ্ধে সবাইকে জেগে উঠতে হবে।”

“সেজন্য ঐক্যের রাজনীতি করতে হবে। যার যার রাজনৈতিক দল বিসর্জন না দিয়েই ঐক্য সম্ভব।” এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন-“আপনাদের দুজনের মধ্যে একজন অতীতে বিরোধীদলীয় নেত্রীর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন এবং আরেকজন আরেক বিরোধীদলীয় নেত্রীর সঙ্গে ইফতার পার্টিতে যোগদিয়েছেন। এখন আপনার ঐক্যের ডাক দিয়ে আবার অতীতের মতো জোট করবেন কি না?”

এর উত্তরে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪দলীয় জোটে থাকা ড. কামাল বলেন, “বলির পাঠা বানানোর (জনগণকে) কোনো সম্ভাবনা নেই।” একই প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির কয়েকটি কর্মসূচি সংহতি জানানো বিকল্পধারা সভাপতি বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত তারা কোরআন শরিফেহাত দিয়ে বলবে না যে- তারাআর সন্ত্রাস করবে না, আর কখনো দুর্নীতি করবে না, আর কখনো গণতন্ত্রহীনতা করবে না, আর কখনো বিরোধীদলের ওপর অত্যাচার-জুলুম করবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আর ইফতার খাওয়ার প্রয়োজন নেই।”

বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল প্রায় দুই দশক আগে আওয়ামীলীগ ছেড়ে গণফোরাম গঠন করেন। এরপর ২০০৪ সালে তারদল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট গড়ে আন্দোলনে অংশ নেয়।

২০০৭ সালে ২২ জানুয়ারির (বাতিল হওয়া) নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে বিকল্পধারা ও গণফোরাম দুটি দলই ছিল। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকেনি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে বিএনপির চলমান আন্দোলনকে বিকল্পধারা সমর্থন দেবে বলে জানিয়েছে। গত রমজানে খালেদা জিয়ার ইফতার পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব বি চৌধুরী।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সাবেক রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরী বলেন, “সংবিধান সংশোধনীর রায়েই বলা হয়েছেআরো দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন জানাতে সেখানে গিয়েছিলাম।”

এক সাংবাদিক ড. কামালকে প্রশ্ন করেন- “গত নির্বাচনের আগেও আপনি ঐক্য করেছিলেন। আবার নির্বাচন এগিয়ে আসায় ঐক্যকরার ঘোষণা দিচ্ছেন। তাহলে আপনার ঐক্য কি নির্বাচনকেন্দ্রিক?” এ প্রশ্নের উত্তর সরাসরি না দিয়ে ড. কামাল বলেন, “২০০৪ এ আমরা যে ঐক্য গড়ে তুলেছিলাম, যে দাবিগুলো ছিল, সে প্রচেষ্টার ফসল হল ২০০৮ সালের নির্বাচন। যদিও শেষ মুহূর্তে জোটে আমার অংশগ্রহণ ছিল না।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কী ধরনের সরকার হবে, নির্বাচন পদ্ধতি কেমন হবে, তা ঠিক করবে গণজাগরণ, গণশুনানি ওগণদাবি। সংবিধান সংশোধনীর যে রায় হল সেখানেই বলা হয়েছে, আরো দুইবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারবে।”

দুই নেতার এই অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালনের দায়িত্ব নেন সত্তরের দশকের জনপ্রিয় ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মান্না। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দলে সংস্কারবাদী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই নেতা পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাননি।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতে মান্নার নাম প্রস্তাব করেন প্রথম আলোর কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ। প্রথম সারিতে আবুল মকসুদের পাশে ছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক এ বি এম মূসা এবং প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক মিজানুর রহমান খান।

ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্নাতার বক্তব্যের শুরুতেই কামাল হোসেনকে বাংলাদেশের রাজনীতির ‘প্রবাদ পুরুষ’ আখ্যায়িত করেন। কামাল হোসেন ও বদরুদ্দোজাচৌধুরীর বক্তব্যে সহমত পোষণ তাদের ‘সহায়তা করা উচিৎ’ বলে মন্তব্য করেন আবুল মকসুদ।

এই দুই নেতা ‘প্রত্যাশা পূরণ’ করতে পারবেন বলে আশা করেন এ বি এম মূসা।