পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে নানা অভিযোগের স্তূপ জমেছে। এসব অভিযোগের সুরাহা খুঁজতে হিমশিম খাচ্ছে দাতা সংস্থাগুলো। ধারণা করা হচ্ছে এর সমাধানে অন্তত ২ থেকে ৩ বছর সময় লেগে যাবে। যে কারণে সরকার ও দাতা সংস্থাগুলো অভিযোগের বিষয়ে আলোচনায় বসে দ্রুত সমাধানে আগ্রহী। আগামী বছরের জানুয়ারিতেই দরপত্র চূড়ান্ত করে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করতে চাচ্ছে সরকার ।
গতকাল সোমবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার দফতরে সাংবাদিকদের বলেন, ইভেঞ্চার এন্টারপ্রাইজ নামে বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান চীনে তাদের একটি অফিসে বসে একের পর এক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হচ্ছে এমন ই-মেইল ও ফ্যাক্স পাঠাচ্ছে দাতা সংস্থাগুলোর কাছে। এরকম আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পেয়েছে সরকার। দাতা সংস্থাগুলোর কাছে প্রমাণপত্র (এভিডেন্স) চাওয়া হয়েছে; কিন্তু দাতা সংস্থার কাছে কোনো প্রমাণপত্র নেই। অভিযোগ ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে দাতাসংস্থাগুলো অফিসিয়ালি চিঠি দিলে সেগুলো তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে। অর্থমন্ত্রীর ভাষায়, সরকার এসব ‘বদমাশ’ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশি-বিদেশি কতগুলো কোম্পানি আছে, যারা নিজেদের অফিসে বসে দাতা সংস্থাগুলোতে নানা অভিযোগ ফ্যাক্স ও ই-মেইল করে। তিনি বাংলাদেশি একটি কোম্পানির নামও প্রকাশ করেন। এসব অভিযোগের কোনো তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় বিভ্রান্তিতে পড়ে যাচ্ছে দাতা সংস্থাগুলো। সময় ক্ষেপণ হচ্ছে অভিযোগ তদন্তে। এতে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে।কানাডিয়ান কোম্পানি এসএনসি-লাভালিনের সম্ভাব্য দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর তা তদন্ত করার জন্য বিশ্বব্যাংক ওই দেশটির প্রতি অনুরোধ জানায়। সেই মতে তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, যে কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠবে সেই দেশ এটা তদন্ত করবে। তাছাড়া কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করে বাদ দিলেই হয়। এনিয়ে সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।
বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসব দুর্নীতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা অযোগ্যতার অভিযোগ আছে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করে পদ্মা সেতুর প্রকল্প তালিকা থেকে বাদ দিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। এক্ষেত্রে দেরি করার সুযোগ নেই।
বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসাবেল এম গেরেরো অর্থমন্ত্রীকে বলেছেন, অসংখ্য নকল বা অপ্রকৃত (স্পিউরিয়াস) অভিযোগ জমা হয়েছে তাদের কাছে; কিন্তু এর কোনো সত্যতার প্রমাণ তাদের কাছে নেই। এই বিষয়টিই তিনি বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্টদের জানাতে এসেছেন।

ব্রিফিংকালে অর্থমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর কাজ তিনটি ধাপে বিভক্ত। এর প্রথম ধাপে রয়েছে পরামর্শক নিয়োগ। যারা পুরো সেতু নির্মাণ কাজটা দেখবে। দ্বিতীয়ত, দরপত্র নিষ্পত্তি করা এবং তৃতীয় ধাপে রয়েছে নদী শাসন।
তিনি জানান, প্রথম ধাপের পরামর্শক নিয়োগ নিয়েই সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে কানাডিয়ান কোম্পানিটির দুর্নীতি নিয়ে। তার মতে, ওই কোম্পানিটি বাদ দিয়েই কাজ এগুতে হবে। কানাডা সরকার তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। এতে আমাদের কিছু করার নেই। পরামর্শক নিয়োগ না হওয়ায় দরপত্র চূড়ান্ত হচ্ছে না।
অর্থমন্ত্রী জানান, সরকারের অর্থায়নে সেতু এলাকায় পুনর্বাসনের কাজ চলছে। এছাড়া ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে দুই পাড়ের এপ্রোচ রোড তৈরির কাজও এগুচ্ছে দ্রুত গতিতে।
অর্থমন্ত্রী আরো জানান, আগামী ১৭ তারিখ তিনি লন্ডনে যাচ্ছেন। সেখান থেকে নিউইয়র্ক হয়ে ওয়াসিংটনে বিশ্বব্যাংকের কেন্দ্রীয় অফিসে যাবেন। ওখানে আরো আলোচনা হবে। যত দ্রুত সম্ভব সবকিছু নিরসন করে জানুয়ারিতে যাতে পদ্মাসেতুর দরপত্র চূড়ান্ত করা যায় তা নিশ্চিত করাই হবে তার লক্ষ্য।