তার দেশের ওপর আস্থা যখন তলনিতে, গ্রীসের প্রধানমন্ত্রী জার্মান শিল্পপতিদের প্রতি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন ৷ বার্লিনে জার্মান শিল্পপতিদের সাথে বৈঠকে গ্রীক প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপানদ্রিউ আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন তাদের বিনিয়োগ নষ্ট হবেনা কারন, তার মতে, গ্রীস এই সঙ্কট কাটিয়ে প্রবৃদ্ধির পথে যাবেই ৷
জার্মান চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মের্কেলের উপস্থিতিতে গ্রীক প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেন ঋণের পরিমাণ কমাতে গ্রীসে নজিরবিহীন সংস্কার কর্মসূচি চলছে ৷ এ সপ্তাহের শেষে গ্রীসকে নতুন করে সাহায্য করার ব্যাপারে জার্মান সংসদে ভোট হবে ৷ তার আগে জার্মান করদাতাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন গ্রীসের প্রধানমন্ত্রী ৷ গ্রীসকে আরো ১০৯ বিলিয়ন ইউরো সাহায্য দেয়ার ব্যাপারে ইউরো জোনের ১৭টি দেশকে একমত হতে হবে ৷ সেটাও যে জর্জ পাপানদ্রিউয়ের বড় চিন্তা, সন্দহ নেই ৷ ইউরোপের অন্য ১৭ টি দেশের সাথে ইউরো মুদ্রা গ্রহণ করার পর থেকে গ্রীস প্রচুর ঋণ করতে শুরু করে ৷ সেই ‌ঋণ বাড়তে বাড়তে এখন দাড়িয়েছে ৩৫০ বিলিয়ন ইউরো ৷
বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় কর আদায় কমে যাওয়ায় সেই ঋণের কিস্তি দিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে গ্রীসের জন্য ৷ সেই সাথে গ্রীস ঋণ খেলাপি হয়ে পড়লে ইউরোপের ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে পুরো ইউরোপ ৷ এই আতঙ্কের মাঝে গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে গ্রীসের জন্য সে প্যাকেজ সাহায্য গৃহীত হয়েছিল তার দ্বিতীয় কিস্তি, যার পরিমাণ হবে ১০৯ বিলিয়ন ইউরো, তার ছাড় নিয়ে এখন সমস্যা দেয়া দিয়েছে ৷ গ্রীস কতটা দায়িত্বশীল, তাদের সাহায্য করে কোন লাভ হবে কিনা, কে এই দায়ভার বহন করবে – এসব নিয়ে বিস্তর তর্ক বিতর্ক, আলোচনা চলছে ৷
সংবাদদাতারা বলছেন, সেসব সন্দেহ ঘোচানোর চেষ্টায় গ্রীসের প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপানদ্রিউ জার্মানি গেছেন ৷ সেখানে তিনি বলার চেষ্টা করেছেন, কঠোর ত্যাগ স্বীকার করে গ্রীস তার ঘর সামলানোর চেষ্টা করছে ৷  ত্যাগ স্বীকারের পরও অব্যাহত সন্দেহ এবং সমালোচনায় গ্রীসের মানুষজন হতাশ ৷  প্রধানমন্ত্রী পাপানদ্রিউ মন্তব্য করেন, “গ্রীস কতটা সাহায্য সহমর্মিতা পাবে, আমি তা জানিনা ৷ তবে আমি নিশ্চিত করতে পারি সরকার সমস্ত প্রতিশ্রুতি পালন করবে এবং গ্রীস এই যন্ত্রণার পর্ব শেষে প্রবৃদ্ধির পথে এগুবে ৷
ব্যায় সঙ্কোচের নানা পদক্ষেপ নিয়ে গ্রীসে জন অসন্তোষ বাড়ছে ৷ সম্পত্তির ওপর নতুন একটি কর বসানোর পরিকল্পনার জন্য দফায় দফায় ধর্মঘট হচ্ছে ৷ এমনকী গ্রীসের ভেতর এবং বাইরে এখন একটি মত জোরালো হচ্ছে যে গ্রীসের উচিত ইউরো মুদ্রা ত্যাগ করে আবার দ্রাখমায় ফিরে যাওয়া ৷ গ্রীসে অনেকেই বলছেন, ব্যয় সঙ্কোচে বরঞ্চ পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে, কারণ তাতে প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে ৷
গ্রীসকে সাহায্য করার মূল দায় গিয়ে পড়েছে ইউরো জোনের প্রধান শক্তি জার্মানির ওপর ৷ সেখানে গ্রীসকে সাহায্য করার বিষয়টি স্পর্শকাতর রাজনৈতিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে ৷ জার্মান চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মের্কেল আজ (মঙ্গলবার) গ্রীসের প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন জার্মানি চাইছে ইউরোজনের এই সঙ্কট দূর হোক ৷ জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, ইউরো জোনের কোন একটি দেশের সঙ্কট পুরো ইউরোকে সঙ্কটে ফেলে দিতে পারে৻ “আমরা সেই বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছি ৷ অভিন্ন মুদ্রা ধরে রাখার স্বার্থে এখন আমাদের ঐক্য জরুরি ৷
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যে কোন মূল্যে গ্রীসকে সঙ্কট থেকে বের করে আনা ছাড়া কোন উপায় হয়ত ইউরোপের নেই ৷ কারণ ইউরোপের সব বড় বড় ব্যাংকের কাছেই গ্রীক সরকারের বিশাল বিশাল অঙ্কের ঋণ রয়েছে ৷ সেই ঋণ ফেরত না পেলে, অনেকগুলো ব্যাংক অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ে যেতে পারে যেটা ইউরোপ বা আমেরিকা কেউই এখন চাইছে না ৷