ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে রোববার শুরু হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। ধর্মীয় এ উৎসব ঘিরে বাংলাদেশ এখন আন্দনমুখর। আনন্দময়ীর আগমনী সুরে অনুরণিত চারদিক।

 আজ ষষ্ঠীতে দশভুজাদেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। মাতৃরূপে আজ তিনি পূজাম-পে আগমন করবেন। ৬ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বির্সজনের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনের এ উৎসব শেষ হবে। শ্বশুরবাড়ি কৈলাস থেকে কন্যারূপে তিনি মর্ত্যলোকে আসছেন বাপের বাড়ি বেড়াতে। সঙ্গে আসছেন মায়ের চার সন্তান। জ্ঞানের প্রতীক দেবী সরস্বতী; ধন, ঐশ্বর্যের প্রতীক দেবী লক্ষ্মী, সিদ্ধিদাতা গণেশ এবং বলবীর্য ও পৌরুষের প্রতীক কার্তিক। বছর বাদে মেয়ে আসছেন বাপের বাড়ি, মেয়েকে বরণ করতে তাই আয়োজনেরও কমতি নেই। ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে ৫ দিনব্যাপী এ পূজার সব প্রস্তুতি। ধর্মীয় এ উৎসব ঘিরে বাংলাদেশ এখন আন্দনমুখর। ঘরের বউ-ঝিরা নারিকেলের নাড়ু, মুড়ি, চিড়া, খইয়ের মোয়া, সন্দেশসহ বিভিন্ন উপাচার বানানোর কাজে ব্যস্ত।

ইতিমধ্যে এ উৎসবের সব আয়োজনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। মঙ্গলবার মহাষ্ঠমীর দিন সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে পূজা আরম্ভ। ১১টায় কুমারীপূজা ও রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার মহানবমী। সকাল সাড়ে ৮টায় পূজা আরম্ভ। বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমী। সকাল ৮টায় পূজা আরম্ভ ও ৯টা ৪৮ মিনিটে দর্পণ বিসর্জন। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হবে ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান, অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও সন্ধ্যায় ভোগ আরতি। বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত দুর্গাপূজায় ষষ্ঠীর দিন সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি।

 শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পৃথক পৃথক বাণীতে দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, দেশের জনগণের মাঝে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ঐক্য সৃষ্টিতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশ্ব অঙ্গনে বাংলাদেশ সম্প্রদায়ের স¤প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবই নয়। এটি আজ সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।

সারাদেশে এ বছর প্রায় ২৮ হাজার পূজামণ্ডপে পূজা হবে। ঢাকা মহানগরীতে এ বছর একশ ৯৬টি মণ্ডপে পূজা হবে। পূজা উপলক্ষে সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। রাজধানীতে র‌্যাব ও পুলিশ বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্য মণ্ডপগুলোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন। পূজা উপলক্ষে ৬ অক্টোবর দশমীর দিন সরকারি ছুটি থাকবে। ওই দিন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথকভাবে হিন্দু স¤প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো পূজা উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করবে বিশেষ নিবন্ধ।

রাজধানীর প্রধান প্রধান পূজাম-পগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির কেন্দ্রীয় পূজাম-প, রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, রমনা কালীমন্দির, গুলশান পূজা উদযাপন কমিটি, ধানমন্ডি কলাবাগান মাঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, বাংলাবাজার পূজা কমিটি, নর্থব্রুক হল রোড, প্রতিদ্বন্দ্বী, তাঁতীবাজার পূজা কমিটি, শঙ্ঘমিত্র শাঁখারীবাজার, পাণিটোলা, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান কমিটি, হাজারীবাগ সুইপার কলোনি, গৌতম মন্দির, স্বামীবাগ লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম, ভোলাগিরি আশ্রম, হিন্দুপাড়া এজিবি কলোনির অরুনিমা সংসদ পূজা কমিটি, বৃহত্তর মিরপুর সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদ, বাসাবো বালুর মাঠ ইত্যাদি।