বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে সংগ্রামে সক্রিয় প্রয়াত ভাষাসৈনিক অলি আহাদের প্রথম নামাজে জানাজা বাদ জোহর কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদ মিনারে তার মরদেহ রাখা হয়। বাদ আসর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে তার ২য় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন বিএনপির সিনিয়র নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, বরকত উল্লাহ বুলু, খায়রুল কবীর খোকন, চিকিৎসক নেতা এজেডএম জাহিদ হোসেন, কবি আব্দুল হাই শিকদার, চাষী নজরুল ইসলাম, রাজনীতিক শফিউল আলম প্রধান, শওকত হোসেন নীলু প্রমুখ। ছাত্রলীগ সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু। পরে লাশ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার রাজধানীর পান্থপথে শমরিতা হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহে …… রাজেউন। সকাল ৯টা ২০ মিনিটে তিনি মারা যান বলে বাংলানিউজকে জানান তার মেয়ে ব্যারিস্টার নমিন ফারহানা।তবে বরেণ্য এ ভাষাসৈনিককে কোথায় দাফন করা হবে তা এখনও ঠিক হয়নি উল্লেখ করে পারিবারিকভাবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। হাসপাতাল ও পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, তিনি গত রোববার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শমরিতায় ভর্তি হন। এছাড়া তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। শমরিতার চিকিৎসক প্রফেসর কাজী দীন মোহাম্মদ, প্রফেসর আলি হোসেন, প্রফেসর আফজাল কায়সার, প্রফেসর এমএ আলম, প্রফেসর আবদুর রহমানের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসার দেখভাল করছিলেন। বুধবার দুপুর থেকে তাকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন শমরিতার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. হারুন উর রশিদ। মৃত্যুর আগে অলি আহাদের মেয়ে ব্যারিস্টার ফারহানা বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘বার্ধক্যজনিত কারণে অনেকদিন ধরে হাসপাতালে চারজন ডাক্তারের পরামর্শ নিচ্ছিলেন আব্বা। গত রোববার নিউমোনিয়াসহ আরো কয়েকটি রোগে গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বুকের ফুসফুসের সংক্রমণে (ইনফেকশনে) ভুগছিলেন। গত মার্চ থেকে এটা বেড়ে যায়।’’ অলি আহাদের স্ত্রী প্রফেসর রাশিদা বেগম জানান, “তার কোনো গুরুতর রোগ ছিল না। গত মার্চ থেকে নিয়মিত অসুস্থ হতে থাকেন। এর মধ্যে মার্চ থেকে এপ্রিল টানা দুই মাস হাসপাতালে ছিলেন। মাঝে অবস্থার উন্নতি হলে বাসায় নেওয়া হয়। মাঝে মাঝে অসুস্থ হলে তাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আবার বাসায় চলে যেতাম।’’ তিনি জানান, ‘‘২০০৩ সালে বাথরুমে পড়ে গিয়ে তার কোমড়ের হাড় ভেঙ্গে যায়। তখন থেকেই তিনি মূলত বিছানায় ছিলেন। কিন্তু রোববার হঠাৎ তিনি বুকের ব্যথা অনুভব করতে থাকলে আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।’’ ভাষাসৈনিক অলি আহাদের এক মেয়ে। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার ইসলামপুরে। তার তিন বোন ও পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিন বোন ও এক ভাই মারা গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে শমরিতার চিকিৎসক প্রফেসর কাজী দীন মোহাম্মদ, প্রফেসর আলী হোসেন, প্রফেসর আফজাল কায়সার, প্রফেসর এমএ আলম ও প্রফেসর আবদুর রহমানের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড অলি আহাদের চিকিৎসার দেখভাল করছিল। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অলি আহাদকে ২০০৪ সালে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনের সূচনালগ্নেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এই রাজনীতিক। এক সময়ে আওয়ামী লীগে থাকা এই নেতা স্বাধীনতার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদের গড়া দলে যোগ দেন। আজীবন রাজনীতিতে যুক্ত এই ব্যক্তি ডেমোক্রেটিক লীগের চেয়ারম্যান ছিলেন। ভাষা সৈনিক ও রাজনীতিবিদ অলি আহাদের লেখা ‘জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫-১৯৭৫’ সেই সময়ে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল। তার একমাত্র মেয়ে ব্যারিস্টার নমিন ফারহানা হাই কোর্টের আইনজীবী।