সাধারণ গ্রাহককে ধোঁকা দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক লি. (ডিবিবিএল) । এটিএম কার্ডের বাৎসরিক ফি, দৈনিক লেনদেন ফি, রিসিট ফি, এটিএম নেটওয়ার্ক ফি, অনলাইন ব্যাংকিং ফি ইত্যাদির আবরণে পেতে রাখা ফাঁদে পা দিলেই আর রক্ষা নেই। ঘানি টানতে হয় বছরের পর বছর। তবে গ্রাহকদের এসংক্রান্ত অভিযোগকে একদমই পাত্তা দিচ্ছে না ডিবিবিএল।
গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন, ডিবিবিএল অন্যায়ভাবে চার্জ আদায় করতেই মূলত প্রযুক্তিনির্ভর অনলাইন ব্যাংকিংকে গুরুত্ব দিচ্ছে। অন্যসব ব্যাংক যেসব সেবার ওপর চার্জ আরোপ করে না, এই ব্যাংক তা-ও নিচ্ছে। টাকা আয়ের এই অনৈতিক-অন্যায় কৌশলে ডাচ-বাংলার গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ-হতাশ।
বিরক্ত ও অতিষ্ঠ অনেক গ্রাহক তাদের হিসাব (অ্যাকাউন্ট) বন্ধ করে দিয়েছেন। এখানে হিসাব খোলার ব্যাপারে সচেতন মানুষের আগ্রহ দিনকে দিন শূন্যের কোটার দিকে। অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেছেন, ডাচ-বাংলা নানা ফন্দি ফিকির করে তাদের অর্থ কেটে নিচ্ছে। এদিকে আবার গ্রাহকদের এসব অভিযোগ সম্পর্কে কোনো কথা বলতে নারাজ ডাচ-বাংলা কর্তৃপক্ষ। গ্রাহকদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এস তাবরেজকে টেলিফোন করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শাহাজাদা বসুনিয়া বলেন, “গ্রাহকের অভিযোগ নিয়ে ব্যাংকের কোনো বক্তব্য নেই। গ্রাহকদের অভিযোগ থাকবেই। যাদের ভালো লাগবে না তারা হিসাব বন্ধ করে চলে যেতে পারেন। এতে ব্যাংকের খুব বেশি ক্ষতি হবে বলে আমি মনে করি না।”
গত জুন মাসে বাংলানিউজে ‘গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে ডাচ-বাংলা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
একজন গ্রাহক জানান, “ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম কার্ডে মেয়াদ দেয় আজীবন। কিন্তু পয়েন্ট অব সেলে (পস) তা ব্যবহার করা যাবে মাত্র দু’বছর। তারপর আর তা ব্যবহার করা যাবে না। ফলে বাধ্য হয়ে নতুন কার্ড নিতে হয়। আর নতুন কার্ড নিতে গেলে ফি দিতে হয় ৪৩০ টাকা। এতো স্রেফ অর্থ আদায়ের নয়া কৌশল।“
গ্রাহকদের তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালিয়ে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে আরও অনেক তথ্য।
জানা গেছে, ব্যাংকটির গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২৩ লাখ ৫০ হাজার। প্রতি দুই বছর পর পর নতুন কার্ড নেওয়ার ফলে এর মাধ্যমে ব্যাংকটি তুলে নিচ্ছে ১০১ কোটির টাকার বেশি।
গ্রাহকরা জানান, তাদের হিসাব থেকে অঘোষিত চার্জ কেটে নেওয়া হচ্ছে। যেসব চার্জ ধার্য করার কথা হিসাব খোলার সময় গ্রাহকদের বলা হয়নি, এখন সেরকম চার্জ ধার্য করে হিসাব থেকে টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এটিএম নেটওয়ার্ক ফি নামের একটি ফি আদায় করেছে ব্যাংকটি। প্রত্যেক গ্রাহকের হিসাব থেকে ২৩০ টাকা করে কেটে নেওয়া হয়েছে ফি হিসেবে। বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা বিবেচনা করে হিসাব করলে দেখা যায়, এতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। অথচ হিসাব খোলার সময় এমন ফি নেওয়ার কথা গ্রাহকদের বলেনি কর্তৃপক্ষ।
হুমায়ুন কবির জুয়েল নামের একজন গ্রাহক জানান, এটিএম কার্ডের চার্জ যেখানে সব ব্যাংকে ২০০-৩৪৫ টাকার মধ্যে সেখানে ডাচ-বাংলার চার্জ ৪৬০ টাকা।
জানা গেছে, ডিবিবিএলের আর শাখার সংখ্যা প্রায় ১২১টি। আর এটিএম বুথ সংখ্যা দুই হাজার ৭৯টি।