দরপতনের প্রতিবাদে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভে-বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশের শেয়ারবাজার। গতকাল রোববার রাজধানীতে বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা আমরণ অনশন শুরু করেছেন। রাজধানীতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে কয়েকশ বিনিয়োগকারী এই কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে বহু নারীও আছেন যারা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে শেয়ারবাজারে লুঠতরাজের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

আয়োজনকারীরা বলছেন, শেয়ারবাজারে মূল্যের উঠানামা থাকবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু বাংলাদেশে যা চলছে সেটা অস্বাভাবিক। এর প্রতিবাদেই তারা এ ধরনের কর্মসূচি নিতে বাধ্য হয়েছেন। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি হস্তক্ষেপ না করলে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ।

বিনিয়োগকারীদের এ আন্দোলনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ মহাজোট সরকারের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরাসরি উপস্থিত হয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন। বিনিয়োগকারীদের দাবি,  শেয়ারবাজারে এখন যা হয়েছে তা পতন নয়, মহাপতন। ২০১০ সাল থেকে লাগাতর পতন ও মহাধ্বস চলছে। প্রকাশ্য দিবালোকে আমাদের টাকা লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের অনেকে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে বর্তমান পরিস্থিতির প্রতিবাদ জানান।তারা অভিযোগ করছেন, যে শেয়ারবাজারে লুটপাট চলছে। বিনিয়োগকারীদের সুনির্দিষ্ট দাবী সত্ত্বেও সরকারের তরফে সেরকম কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে তারা বলছেন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে ফিরিয়ে এনে শেয়ারবাজারকে স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

এর আগেও অব্যাহত দরপতনের প্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীরা রাজপথে সহিংস বিক্ষোভ করেছে।বর্তমান পরিস্থিতির জন্যে তারা অর্থমন্ত্রীরও পদত্যাগের দাবী জানায়। এ বিষয়ে তারা এখন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবী জানান। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এবং সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে শেয়ারবাজারে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে হবে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ইয়াওয়ার সাঈদ বলছেন, দু:খজনক হলেও সত্য যে এখনও আমরা কোন কার্যকর পদক্ষেপ দেখিনি। এখন বিনিয়োগকারীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে এবং দিনের পর দিন অপেক্ষা করার অবস্থা তাদের নাই। তিনি বলেন,সরকারকে একটা বার্তা দিতে হবে যে তারা কি ধরনের পদক্ষেপ নিতে চান বা পুঁজিবাজারকে তারা কোন জায়গায় দেখতে চান। কিন্তু এটা স্পষ্ট নয়। সরকার বলছে তারা পুঁজিবাজারের উন্নয়ন চান, কিন্তু বাজারের ওপর এমন কিছু বোঝা চাপানো হয়েছে যা সরকারের বক্তব্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

গতকাল বিনিয়োগকারীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা শেয়ারবাজার সমস্যা সমাধানে সরকার আন্তরিক নয় বলে অভিযোগ করেন। তারা মন্ত্রিসভার জরুরি সভা ডেকে শেয়ারবাজার সমস্যার সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যথায় শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের আন্দোলন শেয়ারবাজারে সীমাবদ্ধ থাকবে না_ এমন হুশিয়ারি দিয়ে তারা বলেন, বিনিয়োগকারীদের আন্দোলন জাতীয় আন্দোলনে রূপ নেবে এবং দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। গতকাল বিনিয়োগকারীদের আন্দোলনে শরিক হতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, সরকার কোনোভাবেই বিনিয়োগকারীদের আন্দোলন থেকে পিছু হটাতে পারবে না। রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি দেশব্যাপী প্রধান শহরগুলোতে বিনিয়োগকারীরা প্রতীকী অনশন, অবস্থান কর্মসূচি, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন।

রাজধানী ঢাকার বাইরেও চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও বগুড়াতেও বিনিয়োগকারীরা অনশন করছেন। বিনিয়োগকারীদের কর্মসূচিতে বিএনপি ও জাপা ছাড়াও জেএসডি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি,বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা সরাসরি উপস্থিত হয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। এদিকেও আজও ঢাকায় শেয়ারের ব্যাপক দরপতন হয়েছে।