কয়েকটি ছোট মিল মালিক কম দামে লবণ কিনে সেখান থেকে মুনাফা করছে কয়েকগুণ। আইন অনুযায়ী, শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে অপরিশোধিত লবণ যিনি আমদানি করেছেন, তারই পরিশোধন করে বাজারজাত করার কথা। অথচ বাস্তবে ঘটছে এর উল্টো-এমন পর্যালোচনা বাণিজ্য সচিব মো. গোলাম হোসেনের। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি তার এ পর্যালোচনার কথা বলেন।
সচিব বলেন, একশ্রেণীর ছোট মিল মালিক ২ টাকা ৮০ পয়সা দরে কিনছেন। এ লবণ বড় কোম্পানির কাছে বিক্রি করছেন ৮ থেকে ১০ টাকায়। গত রোববার পর্যন্ত ১ লাখ ২১ হাজার টন অপরিশোধিত লবণ আমদানি হয়েছে। আমদানি হওয়ার মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে ২ থেকে ৩ টাকার লবণ ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করে কেউ কেউ বহু টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর বড় মিলগুলোর বরাবরের মতোই খোঁড়া যুক্তি-যেহেতু বেশি দামে অপরিশোধিত লবণ কিনেছি, তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। বলেন বাণিজ্য সচিব, ইতোমধ্যেই একজন ব্যবসায়ীকে আমরা শনাক্ত করেছি।
গতকাল সচিবালয়ে কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে লবণের মূল্য পরিস্থিতি সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেন বাণিজ্য সচিব গোলাম হোসেন। তিনি বলেন, পর্যবেক্ষণের পরও একটি পণ্যের মূল্য মানুষের প্রত্যাশার মধ্যে নামিয়ে আনতে পারিনি, তা হল লবণ। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী লবণের দাম ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকার মধ্যে থাকা উচিত। কিন্তু তা আমরা পারিনি। ব্যবসায়ী ও মিল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে দাম কমানোর অনুরোধ করেছি। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা খুবই ইন্টেলিজেন্ট (মেধাবী)। তাদের সঙ্গে পেরে উঠি না। সচিব বলেন, মাসে ৭০ হাজার টন ভোগ্য লবণের চাহিদা রয়েছে। এ মাসে আমদানি করা লবণের মধ্য থেকে ৫০ হাজার টন বাজারে সরবরাহ হয়েছে। তা সত্ত্বেও দাম কমছে না। কোনো কোনো কোম্পানি দুয়েক টাকা দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। তিনি বলেন, লবণের দাম ৩৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৩২-৩৩ টাকা করলে হবে না। ২০-২২ টাকার মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব কে এম আবদুল ওয়াদুদকে আহ্বায়ক করে রোববার গঠিত তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের গবেষণা কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান এবং আমদানি ও রফতানি প্রধান নিয়ন্ত্রক দফতরের উপ-নিয়ন্ত্রক একেএম মাহমুদুল হাসান খান। গত ৩০ জুন পর্যন্ত কোন কোন আমদানিকারক লবণ আমদানির জন্য কতটি এলসি খুলেছে, তাদের নাম, ঠিকানা ও আমদানির পরিমাণ, আমদানি করা লবণ ছাড়করণের পরিমাণ, দেশে আসা লবণ কোথায় কীভাবে রয়েছে, লবণের আমদানি মূল্য, দেশে আসার পর শুল্ক ও ভ্যাট পরিশোধের পর মূল্য ও আমদানিকারকের বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করবে এই কমিটি। জানা গেছে, গতকালই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। দুপুরে একটি লবণ কারখানা পরিদর্শনও করেছেন তারা।