পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংককেই পুরোধা মানছে দুই দাতা সংস্থা এডিবি ও জাইকা। আর তাই পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ফিরে না এলে তারাও থাকবে না। সম্প্রতি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে স্পষ্ট করেই তা জানিয়ে দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপানের ঋণদানকারী সংস্থা জাইকা। সমঝোতা হলেও আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে হতে হবে। কারণ ওইদিন পর্যন্তই কার্যকর আছে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বিষয়ে সংস্থা দুটির সঙ্গে করা সরকারের চুক্তি। এর আগে দুই দফা চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বিরাজমান সঙ্কট সমাধানে সরকারকে সুযোগ দিয়েছে তারা। কিন্তু এটিই শেষ সুযোগ। এ সময়ের মধ্যে সমঝোতা না হলে সংস্থা দুটি চুক্তির মেয়াদ আর বাড়াবে না। পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করতে সম্মত হলেও ওই দুই সংস্থার পক্ষে ফিরে আসা সহজ হবে না। তবে ৩১ আগস্টের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের সমঝোতা হলে সংস্থা দুটি চুক্তির মেয়াদ ফের বাড়াবে।
২৯০ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার ঋণ সুবিধা দেওয়ার চুক্তি করেছিল সরকারের সঙ্গে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সেতুর পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সংস্থাটি। এ অবস্থায় ঋণ পেতে সরকারকে কয়েকটি শর্ত দেয় বিশ্বব্যাংক। সরকার সাড়া না দেওয়ায় গত জুনে অর্থায়ন চুক্তি বাতিল করে তারা। বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করায় এডিবি ও জাইকাও কিছুটা পিছ টান দেয়। তাদের পক্ষ থেকে সরকারকে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে এর মেয়াদও বাড়ায় তারা।
এদিকে ঋণচুক্তি পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারকে চারটি শর্ত দেয় বিশ্বব্যাংক। শর্তের মধ্যে ছিল সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানসহ সেতু প্রকল্পে যুক্ত উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের পদত্যাগ, দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে বিশ্বব্যাংকের একটি প্যানেলের অংশ নেওয়া সুযোগ। অন্যান্য শর্ত পূরণের পর শুধু মসিউরের পদত্যাগজনিত বাধাটি অবশিষ্ট আছে। বিশ্বব্যাংকের ঋণ সুবিধা পেতে মসিউরও পদত্যাগ করবেন এমনটি আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত তিনি তা করেননি। এদিকে সময়ও দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এমন অবস্থায় এডিবি ও জাইকা সরকারকে তাদের সর্বশেষ অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে।
গতকাল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নতুন করে এডিবি ও জাইকা পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে না। বিষয়টি ইআরডিকে জানিয়ে দিয়েছে তারা। কোনো অবস্থায় এ দুই দাতা সংস্থা আর মেয়াদ বাড়াতে আগ্রহী নয়।
অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের পরিবর্তে এডিবি বা জাইকাকে প্রধান করে নতুন কোনো চুক্তি হওয়ার সম্ভবনাও থাকছে না। আলাদা আলাদা সংস্থা হলেও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবে না এডিবি বা জাইকা। ফলে বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে এডিবি বা জাইকার পদ্মা সেতুর অর্থায়নে থাকা না থাকা। এ বিষয়ে এডিবি ঢাকা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে বিশ্বব্যাংক সরে না এলে এডিবি বা জাইকার মেয়াদ বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই। বিশ্বব্যাংকে ছাড়া নতুন চুক্তির বিষয়টি জটিল হয়ে দাঁড়াবে। তবে নতুন করে আর মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে এডিবির আবাসিক প্রতিনিধি তেরেসা খো গতকাল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ইআরডিতে এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। একই অনুষ্ঠানে ইআরডির জ্যেষ্ঠ সচিব ইকবাল মাহমুদ জানান, প্রধান দাতা সংস্থার সরে গেলে অন্য দাতা সংস্থার সঙ্গে চুক্তির কার্যকারিতা স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে না। পদ্মা সেতুর বিষয়টিতে এখন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।