কুড়িগ্রামের ১০ গ্রামের নারীদের হাতে তৈরি নকশী টুপি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।

মঙ্গাপীড়িত এ দশ গ্রামের গৃহবধূ, কলেজ-স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীরা টুপি তৈরির কাজ করেন। তবে ঈদের সময়টাতে তাদের যেন দম ফেলারও সময় থাকে না।

কারিগররা জানান, দশ গ্রাম থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৬০ হাজার টুপি ওমান, কুয়েত, সৌদিআরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। সেখানে প্রতিটি টুপি বিক্রি হয় গড়ে এক হাজার টাকায়।

প্রায় এক যুগ আগে উলিপুর উপজেলার পাতিলাপুর গ্রামের মোর্শেদা বেগম (৩৫) স্থানীয় নারীদের টুপি তৈরির প্রশিক্ষণ দেন। এখন আশপাশের আরো নয় গ্রামের প্রায় ছয় হাজার মানুষ এ কাজের সঙ্গে যুক্ত বলে জানান কারিগররা।

পাতিলাপুর ও তার পাশের নাগরাকুড়া, হোকডাঙ্গা, থেতরাই, কুকুয়াপাড়া, চরুয়াপাড়া, দলদলিয়া, পাণ্ডুল, গুনাইগাছ, বাঙালি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ঈদ সামনে রেখে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই নারীরা সুঁইয়ের ফোঁড়ে টুপিতে ফুটিয়ে তুলছেন নান্দনিকতা।

মোর্শেদা জানান, দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় তার বিয়ে হয়। স্বামী তখন টাঙ্গাইলে কাজ করতেন। বিয়ের পর তিনিও সেখানে গিয়ে একটি তোয়ালে কারখানায় ‘ডিজাইনার’ হিসাবে কাজ নেন। টুপি তৈরির কাজ শেখেন সেখানেই।

পাঁচ বছর পর ২০০০ সালে নিজের গ্রামে ফিরে মোর্শেদা নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে টুপি বানানো শুরু করেন। প্রথমে একটি বেসরকারি সংস্থা তার কাছ থেকে ৫০টি টুপি নেয়। এতে সে সময় তার লাভ হয়েছিল প্রায় ১৫ হাজার টাকা।

“এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। মেয়েরা আমার কাছে শিখতে আসতে শুরু করল। ধীরে ধীরে আশেপাশের দশ গ্রামে টুপি বানানোর কাজ শুরু হলো।”

প্রতিটি টুপির জন্য একজন কারিগর গড়ে ৩০০-৩৫০ টাকা পান। খরচ হয় ৪০-৫০ টাকা। আর মোর্শেদা কমিশন হিসাবে নেন ৩০-৪০ টাকা।

তিনি জানান, প্রতিটি গ্রামে টুপির কাজ ও মান দেখার জন্য একজন করে ‘সুপারভাইজার’ রাখা আছে। তিনি নিজেও গ্রামে গ্রামে ঘুরে কাজের তদারক করেন। ফেনীর দুজন ব্যবসায়ী এসব টুপি মধ্যপ্রাচ্যে পাঠান।