আসছে রোজায় ক্রেতাদের উচ্চমূল্যেই কিনতে হবে ভোজ্যতেল। তেল আমদানিকারক ও উৎপাদকদের সঙ্গে বৈঠকে মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে রমজান মাসে বাজারে ভোজ্যতেল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি দাম না বাড়ানোর নিশ্চয়তা দিয়েছেন উপস্থিত ব্যবসায়ীরা।
ভোজ্যতেলের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গতকাল এক বৈঠকে ব্যবসায়ীরা এমন আশ্বাস দেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ টি এম মুর্তজা রেজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শওকত আলী ওয়ারেছী, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের যুগ্ম প্রধান আব্দুল কাইয়ুম। ব্যবসায়ীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মেঘনা গ্রুপের মোস্তফা কামাল, টিকে গ্রুপের তারিক আহমেদ, সিটি গ্রুপের বিশ্বজিৎ দত্ত প্রমুখ।
বৈঠকে ব্যবসায়ীরা বলেন, বাজারে তেলের যথেষ্ট সরবরাহ রয়েছে। রোজার মাসে তেলের কোনো সংকট হবে না; দামও বাড়বে না। বর্তমান দামই বহাল থাকবে। তবে বর্তমানে ভোজ্যতেল উচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
বৈঠকে অতিরিক্ত সচিব বলেন, রোজার মাসে তেলের সংকট দেখিয়ে মূল্য বৃদ্ধি করা হলে তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া অসাধু ব্যবদায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৈঠকে উপস্থাপিত তথ্যে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল প্রতি মে. টন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৩৪ দশমিক ৩৯ মার্কিন ডলারে। এক মাস আগে এর দাম ছিল ১ হাজার ১৯৪ দশমিক ৭১ মার্কিন ডলার। এক বছর আগে প্রতি লিটার বিক্রি হয় ১ হাজার ২১৬ দশমিক শূন্য ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। অর্থ্যাৎ এক বছরের ব্যবধানে দাম বৃদ্ধির হার মাত্র ১ দশমিক ৫১ শতাংশ।
আর আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের প্রতি মে. টনের বর্তমান (৮ জুলাই) ১ হাজার ৪১ দশমিক ৯১ ডলার। এক মাস আগে দাম ছিল ১ হাজার ১০৬ দশমিক ৬৮ ডলার। এক বছর আগে দাম ছিল ১ হাজার ১৮ দশমিক ৫১ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ বছরান্তে মূল্য হ্রাস পেয়েছে ২ দশমিক ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে এক বছরে সয়াবিন তেলের দাম তেমন বাড়েনি।
আন্তর্জাতিক বাজারের ধোয়া তুলে স্থানীয় বাজারে এক বছরে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। টিসিবির তথ্যে দেখা গেছে, এক বছরের ব্যবধানে প্রতি লিটার লুজ সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। এবং পাম তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ২ দশকি শূন্য ৯ শতাংশ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরিকৃত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বর্তমানে (৯ জুলাই) বিক্রি হচ্ছে ১৩২-১৩৫ টাকায়, এক মাস আগে এর দাম ছিল ১৩০-১৩৫ টাকা। মাসিক মূল্য বৃদ্ধির হার দশমিক ৭৫ টাকা। ৫ লিটার বোতলের বর্তমান বাজারমূল্য ৬৬৫-৬৭০ টাকা। এক মাস আগে দাম ছিল ৬৫০-৬৬০ টাকা। মাসিক মূল্য বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৯১ টাকা।
এছাড়া লুজ সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১২২-১২৩ টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয় ১১৮-১২০ টাকায়। মাসিক মূল্য বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৯৪ টাকা। এবং লুজ পাম তেল প্রতি লিটারের বর্তমান বাজার মূল্য ৯৭-৯৮ টাকা। এক মাস আগে দাম ছিল ৯৫-৯৬ টাকা। মাসিক মূল্য বৃদ্ধির হার ২ দশকি শূন্য ৯ শতাংশ।
বর্তমানে দেশে তেল মজুদের চিত্রও হতাশার। গত ৮ জুলাই পর্যন্ত সয়াবিন তেলের মজুদ রয়েছে ৩৫ হাজার ৪৫৯ দশমিক ৭২০ মে. টন, পাম অলিন ১৮ হাজার ৬৫৮ দশমিক ৮৬৪ মে. টন এবং পাম অয়েল তেলের মজুদ রয়েছে ৭৯৭ দশমিক ৫৭৯ মে. টন। মোট তেলের মজুদ রয়েছে ৫৪ হাজার ৯১৬ দশমিক ১৬৩ মে. টন। ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা ১৪ লাখ মে. টন। রোজায় তেলের চাহিদা হবে ১ লাখ ৭৫ হাজার মে. টন।