স্বামীকে দেওয়া কথা রাখলেন তিনি। এই তো লন্ডন গেমস শুরু হতেই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, প্রিয় মানুষটির জন্য এবার অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণপদক জিততে চান সানিয়া রিচার্ডস রোস। এবং সেটাই করে দেখালেন যুক্তরাষ্ট্রের এ অ্যাথলেট। ৪০০ মিটার স্প্রিন্টে ৪৯.৫৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে পরশু স্বর্ণপদক জিতলেন সানিয়া। এমনিতে স্বামী অ্যারন রোসের সাফল্যই তাতিয়ে দিয়েছিল এ স্প্রিন্টারকে। গত মৌসুমেই সুপার বোল ট্রফি জিতেছে অ্যারোনের ক্লাব জ্যাকসনভ্যাল জাগুয়ার্স। সেটা জেতার পরই অ্যারনকে বলেছিলেন, ‘এবার আমার পালা।’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘আমার স্বামী এখনও বড় টুর্নামেন্টে আমাকে লড়তে দেখেনি। সে শুধু শুনেছে আমি ভালো অ্যাথলেট। তাই তো এবার আমাকে কিছু একটা করে দেখাতে হবে।’ সেই কথা এবার বাস্তবে রূপ দিলেন সানিয়া। পরশু লন্ডনে হাজির থেকে স্ত্রীর এমন সাফল্য দেখলেন স্বামী ন্যাশনাল ফুটবল লিগের ডিফেন্সিভ ব্যাক অ্যারন। মেয়েদের ৪০০ মিটার স্প্রিন্টে রৌপ্যপদক পেয়েছেন সাবেক চ্যাম্পিয়ন গ্রেট ব্রিটেনের ক্রিস্টিন (৪৯.৭০ সেকেন্ড)। ব্রোঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রের ডেডে ট্রোটেরের (৪৯.৭২ সেকেন্ড)।

পরশু লন্ডনের অলিম্পিকে রীতিমতো ঝড় তুলেই সোনার পদকটা নিজের করে নিলেন সানিয়া। ফলে ১৯৮৪ সালের পর এ ইভেন্টে ফের স্বর্ণ পেল কোনো মার্কিন অ্যাথলেট। সর্বশেষ জিতেছিলেন ভ্যালেরি ব্রিসকো-হুকস। তাই তো উচ্ছ্বসিত সানিয়া অনুভূতি জানানোর ভাষাটাও হারিয়ে ফেললেন, ‘এ জয়ের প্রতিক্রিয়াটা আসলে আমি ঠিক ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। তবে এটাও ঠিক, বেশ কিছুদিন ধরেই কঠোর অনুশীলন করেছি আমি। প্রস্তুতির কোনো কমতিই ছিল না। জানতাম ঠিকমতো দৌড়াতে পারলে ট্র্যাকে শেষ হাসি আমারই হবে। তাছাড়া গত চার বছর ধরেই এক নিয়মে অনুশীলন করে গেছি।’

জ্যামাইকান বংশোদ্ভূত এ স্প্রিন্টার লন্ডনে ২০০ মিটার স্প্রিন্টেও স্বর্ণপদকের জন্য লড়বেন। অথচ পাঁচ বছর আগেই ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডকে বিদায় জানিয়েছিলেন তিনি। ইনজুরি আর অসুস্থতা তাকে এতটাই কাবু করে ফেলেছিল যে, মন চাইলেও দৌড়াতে পারছিলেন না। ত্বকের সমস্যাও বেশ ভোগাচ্ছিল তাকে। সব মিলিয়ে অ্যাথলেটিক্সকে গুডবাই জানান তিনি। কিন্তু কিছুদিন পরই পরিবার ও বন্ধুদের অনুপ্রেরণায় সিদ্ধান্ত বদলান সানিয়া। ফেরার জন্য লড়াই শুরু করেন। দীর্ঘ চিকিত্সায় সেরে ওঠেন অসুস্থতা থেকে। অদম্য মনোবল তাকে নিয়ে আসে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে। ব্যাপারটা মনে করে এখনও রোমাঞ্চিত তিনি। জানালেন, ‘আহ! কী যে দুঃসময় কাটিয়েছি! সারাক্ষণই মন চাইছিল আবার ফিরি। তবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি এতটা চমক আমার জন্য অপেক্ষা করছে।’ যার অনুপ্রেরণায় এ সাফল্য সেই অ্যারন রোসের সঙ্গে ট্র্যাকেই আনন্দ ভাগাভাগি করেন সানিয়া। ২৭ বছর বয়সী এ তারকা জানিয়ে দেন, ‘এভাবে আরও কিছুদিন উত্সব করে যেতে প্রস্তুত তিনি!’