এবার তাহলে ভারতের ক্রিকেটভক্তরাও মনে করছেন, তাদের চিরকালীন ক্রিকেট আইডল শচীন টেন্ডুলকারের যাওয়ার সময় হয়ে গেছে! নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের তিন ইনিংসে একইভাবে বারবার বোল্ড হওয়ার পর সারা ভারতে এটাই চায়ের টেবিলের এক নম্বর ইস্যু। সে কারণেই ভারতের ইংরেজি দৈনিক ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ কাল সারা দেশে এক অনলাইন জরিপ করেছিল। তাতে শচীনের অবসর নেওয়ার পক্ষে কত ভোট পড়েছে জানেন? ৫৬ শতাংশ। ‘দ্য ডেইলি মেইল’ প্রথম পাতায় শচীনের ছবি ছাপিয়ে শিরোনাম করেছে ‘শচীনের পথচলা কি এখানেই শেষ?’
আসলে শচীনকে নিয়ে বিতর্কটা তুলেছিলেন আরেক লিজেন্ড সুনীল গাভাস্কার। যিনি শচীনের বারবার বোল্ড হওয়া দেখে টিভি ধারাভাষ্যে বলেছিলেন, ‘বয়সের কারণেই শচীন ওর রিফ্লেক্স হারিয়ে ফেলেছে। পা ঠিকমতো নড়ছে না। তাতেই দেখা দিচ্ছে টেকনিক্যাল ত্রুটি। ফলে বারবার বোল্ড হচ্ছে।’ এরপরই শচীনের পক্ষে-বিপক্ষে চলছে নানা মুনির নানা মত। তবে ভারতের ক্রিকেটভক্তরা কিন্তু তাদের রায় দিয়ে ফেলেছেন!
একটি লোক ২৩ বছর ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছেন। টেস্ট এবং ওয়ানডেতে সর্বাধিক রান এবং সেঞ্চুরির রেকর্ডের মালিক ৩৯ বছর বয়সেও ক্রিকেটের প্রতি তীব্র আগ্রহ এবং ভালোবাসা নিয়ে খেলে চলেছেন। কিন্তু কিউইদের বিপক্ষে তার ব্যর্থতার ধরন ফের প্রশ্ন তুলেছে আর কতদিন টানবেন ক্রিকেটের অন্যতম গ্রেট ব্যাটসম্যানটি?
গাভাস্কারের সঙ্গে কিছুটা হলেও একমত হয়েছেন আরেক সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। যিনি একসময় শচীনের সতীর্থ ছিলেন। তিনিও বলেছেন, ‘বলের লাইনে আড়াআড়ি খেলতে গিয়েই শচীন বারবার বোল্ড হচ্ছে। এটা টেকনিক্যাল ভুল। তবে শচীন ফিরবে বলেই আশা করছি। এর আগে ২০০২ সালেও পরপর তিনবার বোল্ড হয়েছিল শচীন। তারপর দুর্দান্তভাবে ফিরে এসেছিল। এবারও তাই হবে বলে মনে করছি।’ তবে সৌরভ বলেছেন, ‘ম্যাচ অনুশীলনের অভাবেই শচীন আপাতত ফর্মে নেই। কিন্তু ওর খেলায় বয়সের ছাপ পড়েনি।’ বর্তমানে সংসদ সদস্য সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনও মনে করছেন শচীনের রিফ্লেক্স কমে গেছে। যে কারণে তার পা যথাযথ নড়ছে না। ভুল লাইনে বল খেলতে গিয়ে উইকেট হারাচ্ছে।
টেস্টে ৫১ সেঞ্চুরির মালিক শচীন গত ২৫টি টেস্ট ইনিংসে কোনো সেঞ্চুরি পাননি। তার শেষ টেস্ট সেঞ্চুরি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কেপটাউনে, ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে। কিউইদের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে তার সর্বোচ্চ স্কোর ২৭। তার আগে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আট টেস্টের দুটি সিরিজেও শচীন ব্যর্থ। দুটি সিরিজেই ভারত হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল। আর শচীন দুটি সিরিজের ১৬ ইনিংসে মাত্র চারটি হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন। এই মুহূর্তে বিশ্বক্রিকেটে শচীনই সবচেয়ে সিনিয়র ক্রিকেটার। তার সমসাময়িকরা সবাই অবসরে। কিন্তু ক্রিকেট লিজেন্ডের কথা, তিনি এখনও খেলাটা উপভোগ করছেন আর সময় হলে কাউকে বলতে হবে না, নিজেই সরে দাঁড়াবেন। তবে সমালোচকদের মুখ তো তিনি আর আটকাতে পারবেন না। ঠেকাতে পারছেন না ক্রিকেটভক্তদের তীক্ষ হুঁলও। ব্লগেই লেখা হচ্ছে, ‘শচীনের জন্য আমাদের খারাপ লাগছে না, দুঃখ হচ্ছে।’
শচীনের শততম সেঞ্চুরির আগেও এমন কথা উঠেছিল। ৯৯ থেকে একশ’তে পৌঁছতে শচীনের এক বছর লেগেছে। এ বছরের মার্চে ঢাকায় এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে শততম সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। কিন্তু ফের ব্যাটিং ব্যর্থতায় সমালোচনায় বিদ্ধ তিনি। সঙ্গে সম্মান নিয়ে সরে দাঁড়ানোরও আহ্বান। তবে এমন দুঃসময়ে অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে পাশে পেয়েছেন শচীন। যিনি বলেছেন, ‘যখনই শচীনকে নিয়ে সমালোচনার বন্যা বয়, তারপরই তার ব্যাট একটা দুর্দান্ত জবাব দেয়। এবারও আমি তার অপেক্ষায় আছি।’ যার মানে দেশের মাটিতে ইংল্যান্ড সিরিজেই শচীনের ফের পরীক্ষা। সফল হলে সব মিইয়ে যাবে। আর ব্যর্থ হলে-সেটা না হয় তখনই জানা যাবে।