এবার নিয়ে ভারত দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ ঘরে নিয়ে গেল। এর আগে বিশ্বকাপ জেতে তারা ১৯৮৩ সালে লর্ডসে। আর টানা দু’বার রানার্স-আপ হলো শ্রীলঙ্কা। গতবার চূড়ান্ত খেলায় তারা হার মানে অস্ট্রেলিয়ার কাছে। ২৮ বছর পর আবার বিশ্বকাপ শিরোপা ভারতে। ভারতের এই দলের অনেকের জন্মও হয়নি ১৯৮৩ সালে। তাদের কাছে বিশ্বকাপ জয়টা ছিল রূপকথার মতোই। কাল রামরাজ্য ভারতের তরুণতুর্কিদের হাতে রাবণের লঙ্কাপতন হয়। নিজ শহর মুম্বইয়ে স্বপ্ন পূরণ হলো শচীনের। নিজে জ্বলে উঠতে না পারলেও অনুজপ্রতিম সতীর্থরা মাটি কামড়ে থেকে ক্রিকেটদেবতার শেষ সাধের পূর্ণতা দান করেন। গৌতম গম্ভীর আর অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি অভিজ্ঞ কান্ডারীর মতো দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন। পুরো টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে ছিলেন অনুজ্বল সেই ধোনি কাল খেললেন অধিনায়কোচিত ইনিংস। সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেয়ার অনন্য দৃষ্টান্ত রাখলেন তিনি। বরাবরের ব্যাটিং অর্ডার পাল্টে যুবরাজের আগেই তিনি নামেন এবং দারুণ প্রশংসনীয় এক ইনিংস খেলেন। দর্শকের প্রচণ্ড চাপের মুখেও ক্যাপ্টেন ধোনি ছিলেন অবিচল।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে মাহেলা জয়াবর্ধনের অপরাজিত শতকের সুবাদে ৬ উইকেটে ২৭৪ রান করে শ্রীলঙ্কা। তবে দুই লঙ্কান ওপেনার তিলকারত্নে দিলশান ও উপল থারাঙ্গার পৰে হাত খুলে ব্যাট চালানো সম্ভব হয়নি কোনভাবেই। প্রথম দুই ওভার শেষে লঙ্কান স্কোরবোর্ডে শোভা পায় বিনা উইকেটে ৭ রান। রানের গতি বাড়াতে পারেননি দিলশান-থারাঙ্গা। সপ্তম ওভারের প্রথম বলে সাফল্যের দেখা পায় ভারত। ৭ ওভার শেষে মাত্র ১৯ রান লেখা হয় লঙ্কানদের রানের খাতায়। বিনিময়ে থারাঙ্গার উইকেটটি হারাতে হয় তাদের। জহির খানের বলে সেবাগের দুর্দানত্ম ক্যাচে পরিণত হন থারাঙ্গা। ১৫ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ দাঁড়ায় ১ উইকেটে মাত্র ৫৮ রান। বোলারদের পাশাপাশি ভারতীয় ফিল্ডারদের দুর্দানত্ম নৈপুণ্যে চাপেই পড়তে হয় শ্রীলঙ্কাকে। ৪৯ বলে ৩৩ রান করে এবারের বিশ্বকাপে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করে সাজঘরের পথ ধরেন দিলশানও। হরভজনের বলে এলবিডবিস্নউর শিকার হন তিনি। দলীয় ১২২ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। ভারতীয় অলরাউন্ডার যুবরাজ সিংয়ের বলে কট বিহাইন্ড হন সাঙ্গাকারা। আউট হবার আগে ৬৭ বলে ৪৮ রান করেন লঙ্কান দলপতি। এরপর মাহেলা ও থিলান সামারাবীরা জুটি দলকে এনে দেয় মূল্যবান ৫৭ রান। ৩৪ বলে ২১ রান করে সামারাবীরা যুবরাজের শিকারে পরিণত হন। ৪০ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার স্কোরবোর্ডে শোভা পায় ৫ উইকেটে ১৮৩ রান। ৪৫ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার রান দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ২১১ রান। মাহেলা ব্যাট করছিলেন ৭৯ রানে। কুলাসেকারার সংগ্রহ তখন ১৬ রান। শেষ ৫ ওভার ছিল ব্যাটিং পাওয়ার পেস্ন। এই ৫ ওভারে ৬৩ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। মাহেলা অপরাজিত থাকেন ১০৩ রান নিয়ে। ৮৮ বলের এই ইনিংসটিতে ছিল ১৩ বাউন্ডারি। অন্যদিকে দলকে লড়াই করার মতো পুঁজি এনে দিতে ৩০ বলে ৩২ রান করেন কুলাসেকারা। ৯ বলে ২২ রান করে অপরাজিত থাকেন পেরেরা। এ দুই ক্রিকেটার ফাইনালে মাঠে নেমেছিলেন কারণ সেমিফাইনালের দলটিতে চারটি পরিবর্তন করে গতকাল মাঠে নামে শ্রীলঙ্কা। এ ম্যাচে স্রিলাঙ্কার ২টি করে উইকেট নেন জহির খান ও যুবরাজ সিং।

লঙ্কানদের জবাব দিতে নেমে শুরম্নতেই হতাশা সঙ্গী হয় ভারতের।পালার দ্বিতীয় বলেই এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন বীরেন্দর শেবাগ। রানের খাতা খোলারই সুযোগ পাননি তিনি। স্কোরবোর্ডেও তখন কোনো রান জমা হয়নি। দলীয় ৩১ রানের মাথায় শচীন টেন্ডুলকার সাজঘরের পথ ধরলে একেবারে খাদে পড়ে যায় ভারত। অফ-স্ট্যাম্পের বাইরের বল স্টিয়ার করার চেষ্টা করেন শচীন। কিন্তু পারেননি। বল তার ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারার হাতে। ১৪ বলে ১৮ রান করেন তিনি, ২টি চারের সাহায্যে। তবে দলকে সেই চাপ থেকে মুক্তি দিতে সচেষ্ট হন গৌতম গম্ভীর ও বিরাট কোহলি। দু’জনে মিলে দলকে টেনে নিতে শুরম্ন করেন নিরাপদ বন্দরে। বেশ ভালই ব্যাট চালান তাঁরা। ১৫ ওভার শেষে ভারতের স্কোরবোর্ডে লেখা হয় ২ উইকেটে ৮১ রান। এ জুটি শ্রীলঙ্কানদের জন্য সত্যিকারের ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়ায়। তবে দিলশানের স্পিন বলে এক সময় থেমে যেতে হয় কোহলিকে। ৪৯ বলে ৩৫ রান করে দিলশানের কাছে কট এ্যান্ড বোল্ড হন তিনি। ১১৪ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় ভারত। ক্রিজে আসেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। গাম্ভীরের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে বিপদমুক্ত করার চেষ্টা চালান ভারত দলপতি। ১২২ বলে ৯৭ রান করে পেরেরার বলে বোল্ড হন গম্ভীর। ততৰণে ভারতীয়রা অবশ্য নিরাপদ অবস্থানে। জয় থেকে মাত্র ৫২ রান দূরে তারা। হাতে রয়েছে ৬ উইকেট। ম্যাচ যেন অনেকটাই একপেশে আর নিরম্নত্তাপ হয়ে যায়। ভারতের জয়টা হয়ে যায় সময়ের ব্যাপার। ধোনি ৭৯ বলে ৯১ রান করে আর যুবরাজ সিং ২৪ বলে ২১ রান করে ভারতকে পৌছে দেন জয়ের বন্দরে।

এভাবেই ক্রিকেট মহারনে জয় হল ভারতের।

স্কোরকার্ড :

শ্রীলঙ্কা : ২৭৪/৬, ৫০ ওভার, জয়াবর্ধনে ১০৩ অপ., সাঙ্গাকারা ৪৮, দিলশান ৩৩, কুলাসেকারা ৩২, যুবরাজ ২/৪৯, জহির ২/৬০।
ভারত : ২৭৭/৪, ৪৮.২ ওভার, গম্ভীর ৯৭, ধোনি ৯১ অপ., কোহলি ৩৫, মালিঙ্গা ২/৪২, দিলশান ১/২৭।
ফল ॥ ভারত ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ফাইনাল ॥ মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত)।
ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট ॥ যুবরাজ সিং (ভারত)।