ঢাকার পিলখানার দরবার হলে,যেখান থেকে ২০০৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়েছিল, সেখানেই গঠিত একটিআদালতে মোট ৭৩৩জন জওয়ানের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হয়।
এর মধ্যে ১০জন বেকসুর খালাস পান, ৬৪ জনকে সর্বোচ্চ সাত বছরের এবং বাকিদের নানা মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়। এই বিদ্রোহের জন্য সারা দেশে যে এগারোটি বিশেষ আদালত গঠন করা হয়েছিলো তারপ্রথমটিতে বিচার কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে। ১৯৭২ সালের একটি বিডিআর আইনের আওতায় এই বিচার চলছিলো। কিন্তু এরই মধ্যে সংস্থাটি পুনর্গঠন করে এর নাম বদলে রাখা হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।
বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে গত ডিসেম্বর মাস থেকে কার্যকর হয়েছে একটি নতুন বিজিবি আইনও।
বিদ্রোহ মামলায় সরকারি একজন কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল বলছেন, শনিবারের এই রায়টির মাধ্যমেই কার্যকারিতা হারাচ্ছে ১৯৭২ সালের বিডিআর আইন। কার্যকারিতা হারাচ্ছে বিদ্রোহের বিচারে গঠিত বিশেষ আদালতগুলো, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও আর ওই দায়িত্বে থাকবেন না।
তবে ২০০৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি সংঘটিত বিডিআরবিদ্রোহের সাথে সম্পৃক্ত নতুন কাউকে যদি পাওয়া যায়,তাহলে তাদের বিচার পুরোনো আইন অনুযায়ীই হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। গত তিন বছর ধরে বিডিআর বিদ্রোহে গঠিত বিশেষ আদালতগুলোতে ৫৭টি মামলায় মোট ৬০৪৬জন জওয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিচার হয়।
এর মধ্যে সব মিলে ৫,৯২৬জনকে দন্ড দেয়া হয়েছে, বাকিদের কয়েকজন মারা গেছেন এবং ১১৫ জনকে অভিযোগ না প্রমাণ হওয়া বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। দন্ডপ্রাপ্তদের কেউই আর ফিরে পাচ্ছেন না তাদের চাকরি। অভিযুক্ত এবং দন্ডপ্রাপ্তকয়েকজনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা রায়নিয়ে বিবিসি বাংলায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সুষ্ঠু বিচার পাবার অধিকার থেকেও বিডিআরের অভিযুক্ত সদস্যরা অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত হয়েছে বলে আমরা মনে করি ” আদিলুর রহমান খান, অধিকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিযুক্তের স্ত্রী বিএনএনকে বলেন, তার স্বামীঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারেআটক রয়েছেন, কিন্তু বিচারের কোনও রায় হয়েছে কিনা – সেরকম কিছু তার জানাই নেই।
বিডিআর বিদ্রোহের এই বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে আগাগোড়াই প্রশ্ন তুলে আসছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। বিচারিক কার্যক্রমের দিকেবরাবরই নজর রেখে আসছিলো এরকমই একটি সংগঠন হল অধিকার। ওই সংগঠনটির সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান বলছেন, ‘অভিযুক্তদের সওয়াল জওয়াবের ক্ষেত্রে বাধা ছিলো। অভিযুক্তদের নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। সেই স্বীকারোক্তি আদালতে ব্যবহার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বন্দী অবস্থাতে তাদের পর্যাপ্ত খাবার দেয়া হয়নি। বন্দীদশার অন্যান্য অধিকারগুলোও তারা পায়নি। এসব বিবেচনায় আইনে তাদের যেসব সুবিধা পাবার কথা, সেগুলো তারা পেয়েছেন বলে আমরা মনে করি না।’
বিডিআর বিদ্রোহে নিহত এক সেনা কর্মকর্তার অন্তিম যাত্রায় কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তাঁর সহকর্মী ফলে অধিকার মনে করছে সুষ্ঠু বিচার পাবার অধিকার থেকেও বিডিআরের অভিযুক্ত সদস্যরা অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত হয়েছে। তবে সরকারি কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল দাবি করেছেন, এই বিচারের প্রক্রিয়া এবং এর স্বচ্ছতা বরাবরই ছিলো প্রশ্নাতীত। উল্লেখ্য, ঢাকার পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি থেকে দুদিন ধরে চলা একটি বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৩ জনের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার পর সীমান্ত রক্ষী ওই বাহিনীটিতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সংস্থাটির নাম, পোশাক এবং আইন পর্যন্ত বদলে ফেলা হয়। বিদ্রোহের ওই ঘটনায় হত্যা,লুন্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে আলাদাভাবে ফৌজদারী মামলা চলছে, যেটিররায় এখনো ঘোষণা করা হয়নি।