আড়িয়ল বিলে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলে সেখানকার ‘আঠালো মাটি হবে হীরার খনি’, যা অনেকে এখন কল্পনাও করতে পারছেন না, তারা আসলে কী পেতে যাচ্ছেন! যারা এর বিরোধিতা করছেন, তারা উন্নয়নকে ভয় পান। বঙ্গবন্ধুর নাম শুনে আঁতকে ওঠেন। এদের একটি অংশ আড়িয়ল বিলের খাস ও অর্পিত সম্পত্তি ভোগদখল করছেন। আরেকটি অংশ সেটেলার। রাজধানীর মিন্টো রোডে মিনিস্টারস অ্যাপার্টমেন্টে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিমানবন্দর ও সিটি স্থাপন হলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুন্দরতম স্থান হবে এই দোহার, নবাবগঞ্জ ও শ্রীনগর। পর্যটনশিল্পের প্রভূত উন্নয়ন হবে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে এ অঞ্চল। খোলামেলা আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী আড়িয়ল বিলে বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বঙ্গবন্ধু সিটি গড়ার পক্ষে সরকারের বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রাজধানীতে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে, তাতে এ মুহূর্তে জীবন এখানে কঠিন হয়ে পড়েছে। রাজধানীর ওপর থেকে চাপ কমাতে হবে। একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গড়ে তুলে তাকে ঘিরে পরিকল্পিত নগরী প্রতিষ্ঠা করতেই সরকার এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। যেহেতু ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ এবং মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে অবস্থিত আড়িয়ল বিলে ব্যাপক অনাবাদি ও খাস জমি পাওয়া গেছে, তাই সেই স্থানকেই বেছে নিয়েছে সরকার। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, বিমানবন্দর নির্মাণ-সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শন করে এই স্থান নির্বাচন করেছেন। একসময় এখানে ধান উৎপাদিত হতো। এখন অধিকাংশ জমিই অনাবাদি, পানিও থাকে না। মাছও আগের মতো পাওয়া যায় না। এখন বিলটি ভরে যাচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে বিল ভরাট করা হচ্ছে, আশপাশে বাড়িঘর বানিয়ে বসবাস করছে মানুষজন। ১২ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপন-সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাদের প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। সে অনুযায়ী আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর ও সিটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এ খবর পৌঁছার পরই দোহার, নবাবগঞ্জ ও শ্রীনগরের ৯৯ ভাগ মানুষ এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। এ অবস্থায় সরকার যত দ্রুত সম্ভব জায়গা অধিগ্রহণ করবে। মহাজোট সরকারের বাকি তিন বছরের মেয়াদে বিমানবন্দরের অন্তত একটি রানওয়ের নির্মাণকাজ শেষ করা হবে। তবে যারা এ অঞ্চলে বিমানবন্দর ও সিটি নির্মাণের বিরোধিতা করছেন, সবাইকে তাদের ব্যাপারে সতর্ক করে দেন তিনি। স্থানীয়দের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অপপ্রচারে কান দেবেন না। বিমানবন্দর হলে ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাবে। এ বিমানবন্দর নির্মাণে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন নীতিমালা অনুযায়ী পদ্মা সেতু নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্তদের সমান ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, যা হবে ক্ষতির কয়েক গুণ বেশি। দুদিন আগে প্রতিমন্ত্রী তার নির্বাচনী এলাকা দোহার ও নবাবগঞ্জ সফর করেন। সেখানে তিনি সাতটি সমাবেশে বক্তব্য দেন। সে অভিজ্ঞতা থেকে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দোহার, নবাবগঞ্জ ও শ্রীনগরের প্রায় ১০ লাখ অধিবাসীর ৯৯ ভাগই এ বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগে আনন্দিত হয়েছেন। মানুষের সঙ্গে কথা বলে এ রকমই অভিমত মিলেছে। মনে হয়েছে, জনগণ এতটা আহাম্মক নয় যে তারা এমন একটি সুযোগ হাতছাড়া করবে। ক্ষতিপূরণ প্রদান প্রসঙ্গে যে ভয় কাজ করে, তা নিয়েও স্পষ্ট কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের স্পষ্ট নীতি হচ্ছে, কারো বসতভিটা কিংবা বাড়ি অধিগ্রহণ করে কোনো স্থাপনা নয়। ক্ষতিপূরণ ছাড়া কারও জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। দোহার, নবাবগঞ্জ ও শ্রীনগরের ২৫ হাজার একর জমির মধ্যে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বঙ্গবন্ধু সিটি গড়ে তোলা হবে। কী না থাকবে সেখানে! এর মধ্যে ১০ হাজার একর জমির ওপর নির্মিত হবে বিমানবন্দর। বাকি জায়গায় আইটি ভিলেজ, শিল্পনগরী গড়ে তোলা হবে। আকাশপথে যোগাযোগ বিস্তৃত হবে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। বিপুলসংখ্যক মানুষ এতে কাজের সুযোগ পাবে। বেকার যুবক, খেটে খাওয়া মানুষের জন্য কাজের দুয়ার উন্মোচিত হবে। আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিমানবন্দর ও শহর ঘিরে আধুনিক জীবন-প্রণালির সবকিছুই তৈরি হবে এ জায়গায়। আমি নিজে ওই অঞ্চলের একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে গর্বিত। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে অবিশ্বাস্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিমুগ্ধ হয়ে যাবে এলাকার মানুষ। এ অঞ্চলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ যেমন বাড়বে, তেমনি রেল যোগাযোগেরও ব্যাপক উন্নতি হবে। রাজধানীর ওপর থেকে যানজট আর আবাসনের চাপ কমে যাবে ব্যাপক মাত্রায়। উন্নয়ন কর্মকান্ডে যে পরিমাণ মাটি ভরাট করার প্রয়োজন হবে, তাতেও কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। এখানেও কাজ পাবে হাজার হাজার মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে, আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হবে। আধুনিক প্রযুক্তির সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। ইপিজেড, ট্রেড সেন্টার, পর্যটন স্পটের উন্নয়ন ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ সাধিত হবে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের হুঁশিয়ার করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, একসময়ের কুণ্ডু রাজার বাড়ির কয়েক হাজার একর খাস জমি অবৈধভাবে দখল করে রাখা হয়েছে। তাদের নামে সিএস, আরএস রেকর্ড নেই। তারা ক্ষতিপূরণও নিতে পারবে না। এই ভয়ে তারাই বিমানবন্দরের বিরোধিতা করছে। জমি অধিগ্রহণের খবরে তাদের এখন বুকে কাঁপুনি ধরেছে। তারা বিভ্রান্ত করছে সাধারণ চাষিদের। আড়িয়ল বিলের খাস ও অর্পিত জমিতে উত্তরবঙ্গের অনেক মানুষ বসবাস করছে।