নিউইয়র্কে নিঃস্প্রাণ হুমায়ূন আহমেদের পাশে তার অনুজ অপর জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্থানূর মত দাঁড়িয়েছিলেন। অগ্রজের মৃত্যুতে শোক-স্তব্ধ জনপ্রিয় এ লেখক! সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা যেন কারো জানা নেই।

পরিচিত-স্বজনদের জড়িয়ে ধরে নিজেকে হালকা করতে চাইছেন। পারছেন না। ব্যক্তিগত জীবনে বাস্তবিক হলেও ভাই হারানোর শোকে আবেগ সংবরণ করতে পারছেন না। কখনও কাঁদছেন হাউমাউ করে।

মনে হলো নিউইয়র্কের নীল আকাশে যেনো কালো মেঘ ছেয়ে গেছে। দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরের এই শহরের আকাশটাও কি কাঁদছে! শুধু জ্যামাইকা নয়; পুরো নিউইয়র্কজুড়েই যেনো বিষাদ ছুঁয়ে গেছে। অভিবাসী-প্রবাসী বাঙালিদের শোকে ডুবিয়ে দিয়েছে এই কীর্তিমানের মৃত্যু।

কাঁদতে কাঁদতে জাফর ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, “হুমায়ূন শান্তির মধ্য দিয়ে ইহলোক ত্যাগ করেছেন। তার লেখায় দেশের মানুষকে আনন্দ দিয়েছেন। দেশের মানুষ যেনো তার জন্য দোয়া করেন।”

জাফর ইকবাল বলেন, “আমার মা হয়তো এ মৃত্যু দেখার জন্য বেঁচে আছেন। ভাই গেছে, এখন হয়তো মাও যাবে।”

ভাই হিসেবে হুমায়ূন কেমন ছিলেন এমন প্রশ্ন করতেই বলেন- “এটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।” এসময় সঙ্গীতশিল্পী এস আই টুটুল জাফর ইকবালকে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

হুমায়ূন আহমেদ ও মেহের আফরোজ শাওন দম্পত্তির দুই সন্তান নিশাদ ও নিনীত এখনও বুঝতে পারছে না তাদের বাবা আর নেই। দুই ভাই মিলে খেলছে। পরিচিত স্বজনরা তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। কেউ তাদের দিকে তাকিয়ে চোখ মুছছেন।

এদিকে, জ্যামাইকায় হুমায়ূনের বাসায় বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৬টায় মেহের আফরোজ শাওনের সঙ্গে কক্ষে রয়েছেন প্রবাসে বসবাসরত সাংবাদিক নাসিমুন নাহার নিনি।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, “শাওন আহাজারি করতে করতে বলছেন, এতো মানুষের প্রার্থনা কেনো আল্লাহ কবুল করলো না…কেন এমন হলো?”

অন্যপ্রকাশের কর্ণধার মাজহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, “সার্জন জজ মিলারকে হুমায়ূন আহমেদ অস্ত্রোপচারের আগে জিজ্ঞেস করেছিলেন- অস্ত্রোপচারে কি আমি মারা যাবো? জজ মিলার বলেছিলেন- অস্ত্রোপচারে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।”

নন্দিত এ লেখকের ছোটবেলার বন্ধু পানসু মণ্ডল বলেন, “হুমায়ূনের জ্যামাইকার বাড়িতে থাকার ইচ্ছে ছিল বহুদিন। সাধ করে বাড়ির আশেপাশে বিভিন্ন ধরণের গাছও লাগিয়েছিলেন। হুমায়ূনের লাগানো গাছগুলো আছে, তিনি নেই।”

এদিকে, জ্যামাইকায় অবস্থানরত জাফর ইকবাল বাংলানিউজকে জানান, হুমায়ূনের লাশ নিয়ে শুক্রবার রাতে ঢাকায় ফেরার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।