নুহাশপল্লীর মাটির প্রত্যেকটি ইঞ্চি তার চেনা, প্রতিটি ঘাস তার চেনা। আপনারা দয়া করে তাকে সেখানেই দাফনের ব্যবস্থা করুন। উনাকে আর কষ্ট দেবেন না। অন্য কোথাও নিয়ে গেলে সে ভয় পাবে। অচেনা জায়গায় ও ভয় পায়।’

দেশে ফিরেই কান্না মিশ্রিত দুর্বল গলায় এভাবেই তার প্রয়াত স্বামী দেশ বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের দাফনের ব্যাপারে মতামত জানান মেহের আফরোজ শাওন।

সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, “ওনার শেষ ইচ্ছা ছিল নুহাশপল্লীতেই। অপারেশনের আগের রাতে সে আমাকে বলেছিলো, আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমাকে নিয়ে সবাই টানাটানি করবে। কুসুম (শাওন), তুমি আমাকে নুহাশপল্লীতে নিয়ে যেও। আমাকে নিয়ে টানাটানি করতে দিওনা।’

সোমবার সকালে হুমায়ূন আহমেদের মৃতদেহ নিয়ে দেশে ফেরার পর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বসে তিনি একথা বলেন। এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন মেহের আফরোজ শাওন।

এ কয়েকদিনের শোকে এতটাই বিহ্বল সে, উঠে দাঁড়ানোর শক্তিও তার ছিল না। এজন্য বিমান থেকে হুইল চেয়ারের সাহায্যেই তাকে নামানো হয়।

কাঁদতে কাঁদতে পানিশূন্য দুর্বল চোখ জোড়া বন্ধ রেখে দুহাত জোড় করে তিনি বারবার একই অনুরোধ করেন যেন হুমায়ূন আহমেদকে নুহাশপল্লীতেই চিরদিনের মত ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হয়। তিনি বলেন, “অন্য কোথাও দাফন করা হলে আমার সন্তানদের বাবার আত্মা কষ্ট পাবে।”

এসময় অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব মিজারুল কায়েস, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ তাকে সান্ত¡না দেন এবং বলেন তার কথামতোই সবকিছু করা হবে।

কাঁদতে কাঁদতে আরও দুর্বল হয়ে গেলে তার মা তহুরা আলী এমপি এবং বোন সেঁজুতি দ্রুত সেখান থেকে শাওনকে নিয়ে যান।

মায়ের কান্না আর লোকজনের ভিড় দেখে সেখানেই চিৎকার করে কাঁদতে থাকে হুমায়ূন আহমেদ এবং শাওনের ছোট ছেলে নিনিদ। ছোট ভাইয়ের কান্না থামাতে তখনই তাকে কোলে নিয়ে ভিড় ঠেলে বেরিয়ে যায় তাদের বড় ছেলে নিষাদ।

এদিকে, জনপ্রিয় এই কথা সাহিত্যিককে গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে দাফন করা হচ্ছে না বলে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার পরিবার। তাকে রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, বনানী কবরস্থানে দাফন করা হতে পারে।

রোববার দুপুরে হুমায়ুন আহমেদের ছোট ভাই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এমনটাই জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, সোমবার সকালে হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ ঢাকায় পৌঁছায়। সেখান থেকে তার মরদেহ সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সেখানে রাখার পর দুপুর আড়াইটায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তাঁর মরদেহ রাখা হবে বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে।

উল্লেখ্য, ঢাকার অদূরে গাজীপুরে হুমায়ূন আহমেদ নিজ হাতে প্রতিষ্ঠা করেন নুহাশপল্লী। প্রাকৃতিক নৈস্বর্গ নুহাশপল্লী হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত প্রায় সব নাটক-সিনেমার অন্যতম স্যুটিং স্পট। লালরঙা মাটির পাহাড়িয়া ঢঙে সবুজ গালিচার বনের মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে প্রায় চল্লিশ বিঘাজুড়ে সবুজ গাছ-গাছালির মাঝে রয়েছে দৃষ্টি নন্দন স্কাল্পচার, থাকার ঘর, বসার ঘর, বৃষ্টি বিলাস, ভূত বিলাস, দিঘি লীলাবতী।

কিছুদিন আগেও চিকিৎসা বিরতির সময় দেশে এসে নুহাশপল্লীতে অবস্থান করেন সদ্য প্রয়াত এ লেখক। এই নুহাশপল্লীতেই দাফন করা হতে পারে হুমায়ূন আহমেদকে।