বাংলাদেশি পণ্য ভারতের বাজারে প্রবেশ ঠেকাতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে বস্ত্র প্রস্তুতকারকদের সংগঠনগুলো এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকায় নেমেছে।

গত বৃহস্পতিবার বিবিসি রেডিওর খবরে বলা হয়, বস্ত্রপণ্য প্রস্তুতকারকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এ চুক্তির বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়কে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। সংস্থাগুলো চুক্তির বাস্তবায়ন রুখতে কিছুটা লবিং করাও শুরু করেছে।
দিলি্ল ও মুম্বাইয়ের বস্ত্রশিল্প প্রস্তুতকারকদের সংগঠন কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইলের মহাসচিব ডি কে নায়ার বিবিসিকে জানান, তাদের (বাংলাদেশের) শ্রমিক সস্তা, বিদ্যুৎ সস্তা, ফলে উৎপাদন খরচও কম। এ কারণে বিশ্বে বাংলাদেশ বছরে রফতানি করে এক হাজার ৮০০ কোটি ডলারের বস্ত্রপণ্য। আর ভারত রফতানি করে মাত্র এক হাজার ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য। এ রকম অবস্থায় ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারকে পুরোপুরি খুলে দেয়ায় বিরাট সমস্যা হবে বলে মন্তব্য করেন নায়ার। তিনি আরো জানান, ৪৬টি পণ্য ভারতে আসার অনুমতি দেয়া হয়েছে তার মধ্যে ৪৫টি পোশাক ও পোশাক তৈরি পণ্য। এ ধরনের পণ্য বাজারে এলে অনেক প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে। মালিকদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন শ্রমিকরাও। কলকাতার ভারত চেম্বার অব কমার্সের সচিব কেকা শর্মা বলেন, কলকাতা রেডিমেড বস্ত্র পণ্য ও হোসিয়ারি পণ্যের বড় বাজার? এই বাজারের পণ্য অসংগঠিত শ্রমিকরাও তৈরি করেন। স্বনির্ভর প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত পশ্চিমবঙ্গের হাজার হাজার মানুষের জীবিকাও এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। এরা কর্মহীন হয়ে পড়বেন। তাদের আপত্তির এটা একটা বড় কারণ বলে জানান কেকা শর্মা?
তবে একটা কাজ সরকার চাইলে করতে পারেন বলে মন্তব্য করলেন মি. নায়ার। রেডিমেড বস্ত্র পণ্যের কাঁচামাল বা তুলা বাংলাদেশে পর্যাপ্ত নেই। বাংলাদেশ তা আমদানি করে মূলত চিন থেকে। কিছুটা হয়তো কোরিয়া বা পাকিস্তান থেকেও আমদানি করা হয়। আমরা চাইবো ভারত থেকে এই কাঁচামাল যাক। এতে ভারতের বস্ত্র শিল্পের একটা অংশের কিছুটা কম ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বলেন মি. নায়ার। প্রসঙ্গত বাংলাদেশ বস্ত্র প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন, বিজিএমই’র সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের একই মত, যা তিনি জানিয়েছিলেন গত সপ্তাহেই। তিনি বলেছিলেন, ভারত যেহেতু বড় তুলো উৎপাদক দেশ, ফলে ভারত থেকেই কাঁচামাল বা তুলা আমদানি করতে পারে বাংলাদেশ। তাতে উপকৃত হবে দুই দেশই। কাঁচামাল নিজেরাই রফতানি করে নিজেদের প্রতিযোগিতা তৈরি করার কোনো মানে হয় না। কিন্তু ভারতের ভিতরেই এই মতের বিরোধিতাও রয়েছে। দক্ষিণ ভারতের বস্ত্র রফতানিকারকদের সংগঠন, ‘তিরুপুর এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ শক্তিভেল এই প্রসঙ্গে বললেন, শুধুমাত্র কাঁচামাল রফতানি করে বস্ত্রশিল্পে বিশেষ কোনো লাভ নেই।। লাভটা রয়েছে রেডিমেড পণ্যে। ফলে কাঁচামাল নিজেরাই রফতানি করে নিজেদের প্রতিযোগিতা তৈরি করার কোনো মানে হয় না। তারা চলতি সপ্তাহেই বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলেও জানান এ. শক্তিভেল। বস্ত্রপণ্য প্রস্তুতকারকদের সংস্থার পক্ষে চুক্তির বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং বস্ত্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি লেখা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে এসংক্রান্ত একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের ৪৬টি পণ্য শুল্কমুক্তভাবে ভারতে প্রবেশের সুযোগ পাবে।