ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির নামে সোমবার এ হরতালের ডাক দেন ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী। রাজধানীতে বড় ধরনের সংঘর্ষ না হলেও চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ফরিদপুর ও নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি ছিল উত্তপ্ত। হরতালে কোরআন শরিফ, মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে সকাল থেকে বিভিন্ন মাদরাসার ছাত্ররা পিকেটিংয়ে নামে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে হরতালের তেমন প্রভাব দেখা যায়নি। পিকেটিং কিংবা মিছিল-সমাবেশ খুব বেশি দেখা যায়নি। সচিবালয়, অফিস-আদালতে কাজ চলেছে। পুঁজিবাজার ছিলো চাঙা।
ট্রেন, বিমান ও লঞ্চ চলাচল ছিলো স্বাভাবিক। মহানগরীগুলোতে বাস চললেও দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল ছিলো খুব কম। স্থল ও নৌবন্দরগুলোতে কাজও ছিলো স্বাভাবিক।মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের বারবার সংঘর্ষে পুলিশের ৩০ সদস্যসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হরতালের সমর্থনে হেফাজত ইসলামের কর্মীরা দেড় শতাধিক বাস ভাঙচুর করে এবং একটি পেট্রলপাম্পে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা পুলিশের একটি চায়নিজ রাইফেল ও একটি ওয়াকিটকি ছিনিয়ে নেয়।
ফরিদপুরে পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে হরতাল-সমর্থনকারীরা। তারা নগরকান্দা উপজেলা কার্যালয়েও ভাঙচুর করে। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মাদ্রাসাছাত্ররা সকাল থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছিল। পুলিশ অবরোধ সরাতে গেলে মাদ্রাসাছাত্ররা র্যাব-পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে সেখানে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশের ১০ সদস্যসহ অর্ধশত লোক আহত হয়।
শিক্ষানীতি, প্রস্তাবিত নারীনীতি ও ফতোয়াবিরোধী হাইকোর্টের রায় বাতিলের দাবিতে গত ৮ মার্চ এই হরতাল ডাকে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি। এতে সমর্থন দেন হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফির নেতৃত্বাধীন কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজত ইসলাম। ফলে সারা দেশের কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা হরতালে রাজপথে ছিল।
হরতাল শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির আমির মুফতি ফজলুল হক আমিনী বলেন, গত দুই বছরের মধ্যে এটি সবচেয়ে সফল হরতাল। সারা দেশে ২৭৫ জন নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, পুলিশের হামলায় আহত হয়েছে ২০০ জন। এর মধ্যে গুরুতর আহত হয়েছে ৮৫ জন। আমিনী বলেন, ‘অন্যরা যেখানে অতীতে হরতালে মাঠে নামতে পারেনি, সেখানে আমাদের কর্মীরা কোথাও মাঠ ছাড়েনি।’
হাটহাজারীতে মাদ্রাসাছাত্রদের তাণ্ডব: চট্টগ্রাম থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, গতকাল ভোর ছয়টার দিকে হরতাল-সমর্থকেরা হাটহাজারী মইনুল ইসলাম দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়ক অবরোধ করে। এতে ঢাকা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ফটিকছড়ির মাইজভান্ডারগামী অন্তত ৪০০ বাসসহ পাঁচ শতাধিক গাড়ি আটকা পড়ে।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে হাজার খানেক হেফাজতকর্মী লাঠিমিছিল নিয়ে অক্সিজেন মোড়ের দিকে যেতে চাইলে বালুছড়ায় পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় মাদ্রাসাছাত্ররা শিউলি পেট্রলপাম্পে আগুন দেয় ও ভাঙচুর করে। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে পেট্রলপাম্পের আগুন নেভান।
একপর্যায়ে হেফাজতকর্মীরা পিছু হটে রাস্তায় থাকা বাস নির্বিচারে ভাঙচুর করে। এতে বাসে থাকা নারী-পুরুষ ও শিশুরা ভাঙা কাচের আঘাতে আহত হয়। তারা বালুছড়া থেকে বড় দীঘিরপাড় পর্যন্ত আটকে থাকা প্রতিটি বাসে ভাঙচুর চালায়। মাদ্রসাছাত্রদের হাত থেকে বাঁচতে বাসের লোকজন রাস্তার দুই পাশের বাড়িঘরে আশ্রয় নেয়।অধিকাংশ জেলায় মিছিল এবং মিছিল থেকে অনেককে গ্রেপ্তার করা হলেও নীলফামারী, জয়পুরহাটসহ কয়েকটি জেলায় হরতালের পক্ষে কোনো মিছিলও দেখা যায়নি।