পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন রক্ষার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করছে সরকার। তার অভিপ্রায় অনুযায়ী পদ্মার ইলিশ গঙ্গাপাড়ে সহজলভ্য করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে রপ্তনি করা ইলিশের দাম কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সম্পাদনে মমতার মন পাওয়ার জন্যই এ চেষ্টা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ করতে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ইলিশের রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়। রপ্তানিকারকরা ৬শ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ৪ থেকে সাড়ে ৪ ডলার (এফওবি) দেখিয়ে রপ্তানি করেছে। এই মূল্য অনেক কম বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম ৬ ডলার নির্ধারণ করে দেয়। ১ থেকে দেড় কেজি ওজনের একটি ইলিশের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারিত হয় ৮ ডলার। আগে এর রপ্তানি মূল্য  দেখানো হতো ৫ থেকে ৬ ডলার। দেড় কেজির বেশি ওজনের ইলিশের দাম নির্ধারণ করা হয় ন্যূনতম ১১ ডলার। রপ্তানিকারকরা এর আগে এই ইলিশের মূল্য ৭ থেকে ৮ ডলার দেখিয়ে রপ্তানি করতো। এই প্রক্রিয়ায় রপ্তানিকারকরা কম মূল্য দেখিয়ে আন্ডার ইনভয়েসিঙের মাধ্যমে ভারতে অর্থ পাচারের সুযোগ পেতো। এই সুযোগে একটি শক্তিশালী চক্র গড়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে। নয়াদিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং বরিশাল চেম্বার অব কমার্স থেকেও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে। তারই প্রেক্ষিতে আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইলিশের দাম বেঁধে দেয়। এর ফলে সরকারের রপ্তানি আয় বেড়েছে। গত ৩ বছর ধরে বছরে প্রায় ১৫ কোটি টাকার বেশি রপ্তানি আয় হচ্ছে। গত বছর ভারতে ৪০ কোটি টাকার ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। মূল্য নির্ধারণের আগে আয় হয় ২৫ কোটি টাকার কিছু বেশি। বাংলাদেশে ২০০৯-১০ সালে ইলিশ উপাদন হয়েছিলো ২ লাখ ৮০ হাজার টন। ঝাটকা নিধন নিয়ন্ত্রণ করার ফলে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। গত দু বছর ধরে বছরে প্রায় ৩ লাখ টন ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে। এর মধ্যে রপ্তানি হয় প্রায় ৫০ হাজার টন। এর বেশির ভাগই হয় ভারতে। এছাড়া যুক্তরাজ্য, কানাডা, যুক্ততরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যেও ইলিশ রপ্তানি হয়।
সূত্র জানায়, ইলিশের বেঁধে দেয়া রপ্তানি মূল্য কমানো হচ্ছে। বর্তমান নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা ১০ ও ১৫ শতাংশ হারে কমানোর বিকল্প প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় এখনও তা চূড়ান্ত করেনি।