রাজধানীতে দিনে রাতে অবাধে চলছে ছিনতাই। এর মাত্রা দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়লেও নির্বিকার পুলিশ। ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণহানির বহু ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইয়ের পর থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশের ব্যবস্থা নেয়ার নজির নেই। উল্টো হয়রানির স্বীকার হতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের নাকের ডগায় ঘটছে এসব ঘটনা। জনগণ অস্ত্রসহ ছিনতাইকারীদের ধরে পুলিশে দিলেও পুলিশ ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করছে না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর সব এলাকায়ই প্রতিদিন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ছিনতাইয়ের পদ্ধতি মুলত দুই ধরনের। এক. পথচারি-রিকশা থমিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছিনতাই করা। দুই. চলন্ত যানবাহন (মোটর সাইকেল-প্রাইভেটকার যোগে) থেকে রিকশা বা বাসযাত্রী বা পথচারীদের হাতে বা ঘাড়ে ঝুলানো ব্যাগ, মোবাইল ফোন বা মহিলাদের গলা ও কানের অলঙ্কার ছোঁ মেরে নিয়ে যাওয়।

ছিনতাইয়ের ভয়ঙ্কর স্পট
রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ১০টির অধিক ভয়ঙ্কর স্পট রয়েছে। সংসদ ভবন থেকে আগারগাঁও তালতলা, মিরপুর চিড়িয়াখানা রোড, যাত্রাবাড়ি থেকে চিটাগাংরোড, সায়েদাবাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকা, খিলক্ষেত থেকে বিমানবন্দর, বংশাল, গুলশান, নাবিস্ক থেকে মগবাজার পর্যন্ত ও ধোলাইপাড়।

সংরক্ষিত এলাকা থেকে ছিনতাই
তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর বাউন্ডারি দেয়া এলাকাটি সংরক্ষিত এলাকা। এখানে সাধারণের প্রবেশাধিকার সীমিত। কিন্তু সন্ধ্যার পরই এখানে ছিনতাইকারীদের অসত্মানায় পরিণত হয়। প্রতিদিন এই এলাকার আশপাশের রাস্তায় কমপক্ষে ৮-১০ টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। আগে থাকতে ফলো করতে থাকা  রিকশাটিকে টার্গেট করে দেয়াল টপকে এসে চাপাতি, চাকুসহ বিভিন্ন অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আরোহীদের সর্বস্ব ছিনিয়ে আবার দেয়াল টপকে সংরক্ষিত এলাকায় চলে যায় তারা। কেউ বাধা দিলে তাকে কুপিয়ে সব কিছু নিয়ে যায়। গত চার মাসে ওই এলাকায় ছিনতাইকারীদের হাতে তিনজনের প্রাণহানি ও কমপক্ষে ২৮ জন আহত হয়েছেন। সর্বশেষ দু’দিন আগেও একজন নিহত ও অপর তিন জনকে কুপিয়ে মাছ ভর্তি পিকাপ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

অথচ এর অপর পাশেই রয়েছে র‌্যাব-২, শেরেবাংলানগর থানা। এ ব্যপারে শেরেবাংলা নগর থানার ওসি জাকির হোসেন মোল্লা জানান, “ওই এলাকাটি যেহেতু খিলক্ষেত থানার মধ্যে সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।”

খিলক্ষেত থানার একাধিক পুলিশ কমকর্তা জানান, মাঝে মাঝে ওই এলাকায় রেইড দিয়ে ছিনতাইকারীদের ধরা হয়। তারা জামিনে বের হয়ে আবার ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়।

কয়েকজন কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিমানবাহিনীর ওই বাউন্ডারি ওয়াল টপকে ছিনতাইকারীরা যাতে না আসতে পারে সে জন্য একটু উঁচু বা তারকাঁটা দিয়ে আটকে দিলে ওই এলাকায়র ছিনতাই রোধ করা সম্ভব হতো। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অনেকবার আলোচনা করেও কোনো লাভ হয়নি।

ছিনতাইয়ের পর পুলিশের ভূমিকা
ছিনতাইয়ের শিকার লোকজন থানায় গেলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা শেষ করে মামলা বা জিডি করতে লাগবে কমপক্ষে এক ঘণ্টা। এরপর একজন তদন্ত কমকর্তার নাম দিয়ে একটি কপি ধরিয়ে দিয়ে বলা হয় ওই কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে। ওই ব্যক্তি ফোন করার পরই সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা জানতে পারবেন তাকে ওই বিষয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। একজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করার চারদিন পরে ফোন করলেও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। ছিনতাইয়ের মামলা বা জিডিতে আগ্রহ দেখায় না পুলিশ। কারণ এখান থেকে নগদপ্রাপ্তির হয় না। এই মামলা বা জিডি ফর্মালিটি। কোনো প্রতিকারের নজির না থাকায় অধিকাংশ ভুক্তভোগী কাগজপত্র না হারালে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন না।

জনগণ ছিনতাইকারীদের ধরে দেয় পুলিশকে
পুলিশ ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করতে না পারলেও সাধারণ মানুষ অস্ত্রসহ ধরে থানায় সোপর্দ করার ঘটনা ঘটছে। গত ৫ জুন সন্ধ্যায় ইস্কাটন এলাকায় দুটি পিস্তলসহ তিন ছিনতাইকারীকে ধরে রমনা থানায় হস্তান্তর করে সাধারণ জনগণ। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি মোটরসাইকেলও জব্দ করা হয়। তাদের দুই দফায় রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

রমনা থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মো. বশিরুল হক জানান, এই তিনজনের নামে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় এখন পর্যন্ত অর্ধশত মামলার খোঁজ পাওয়া গেছে। ডিবির হাতেও তারা কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছে। জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার জড়িয়ে পরছে ছিনতাই কাজে। তাই তারা যাতে আইনের ফাঁক গলিয়ে বের হয়ে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পরতে না পারে সে দিকে নজর দিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।