প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে ফেসবুকে হুমকি ও তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ স্বীকার করেছেন র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া ডা. এহসানুজ্জামান খান।
তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গত জুলাই মাসে হুমায়ূন আহমেদ মারা যাওয়ার আগে-পরে তিনি ও তার কয়েকজন বন্ধু তার প্রতি অযত্ন-অবহেলায় ক্ষুব্দ হয়ে ওঠেন। তারা ওই ঘটনাগুলোর জন্য মেহের আফরোজ শাওন ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর ক্ষুব্দ হয়ে ‘উই হেট মেহের আফরোজ শাওন’ নামে ফেসবুকে একটি গ্রুপ তৈরি করেন। এ গ্রুপ ব্যবহারকারী ১২০০ জন সদস্য বিভিন্ন রকম কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের মাধ্যমে অপপ্রচার করতে থাকেন। এমনকি শাওনকে তারা হত্যা ও দেশছাড়ার হুমকি দেন বলেও সাংবাদিকদের সামনে স্বীকার করেছেন ডা. এহসানুজ্জামান খান।
উল্লেখ্য, মেহের আফরোজ শাওনকে ফেসবুকে হুমকি ও তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর র্যাব-৩ এর একটি দল রোববার সকালে চিকিৎসককে রাজধানীর রমনা থানার ইস্কাটন রোডের অপসোনিন ফার্মাসিউটিক্যালসের সামনে থেকে গ্রেফতার করেন ডা. এহসানুজ্জামান খানকে (৩৬)। এই চিকিৎসক সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকে শাওন ও তার পরিবার নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য প্রচার, হেয় প্রতিপন্নকারী এবং হত্যার হুমকিদাতা গ্রুপের প্রধান উদ্যোক্তা বলে জানিয়েছে র্যাব। গ্রেফতারকৃত ডা. এহসানুজ্জামান খানের পিতার নাম মৃত হাবিবুজ্জামান খান। নেত্রকোনার সাতপাই গ্রামে তাদের বাড়ি। তার মাও একজন গাইনি চিকিৎসক বলে জানিয়েছে র্যাব।
ডা. এহসান আরো জানান, বর্তমানে ১২০০ সদস্য ফেসবুকের গ্রুপটি ব্যবহার করছেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নওরীন নায়না ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী তসলিমা খাতুন গ্রুপের খুবই সক্রিয় সদস্য হওয়ায় তাদের দু’জনকেও এর অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলে গ্রুপটির অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এখন ৫ জন।
গ্রুপটির ইউজাররা গত ৩ মাস ধরে শাওন ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও ছবি আপলোড করে তাদের এভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা ছাড়াও হত্যা ও দেশছাড়া করার হুমকি দিয়ে আসছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের কমান্ডার এম সোহায়েল। তিনি এটিকে সাইবার ক্রাইম বলে উল্লেখ করে জানান, এর বিরুদ্ধে মামলা করবে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে মেহের আফরোজ শাওন, তার পিতা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী, অন্যপ্রকাশের স্বত্ত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলামের স্ত্রী তানজিনা রহমান স্বর্ণা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মেহের আফরোজ শাওন জানান, হুমায়ূন আহমেদ মারা যাওয়ার পর তিনি কম্পিউটার-ইন্টারনেট ব্যবহার করেননি। তিনি মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কাছ থেকে ফেসবুকের গ্রুপটি সম্পর্কে জানতে পারেন। প্রথমে তিনি এটিকে তেমন গুরুত্ব দেননি। সাম্প্রতিক সময়ে ওই গ্রপটি তার বাসার টিএন্ডটি ফোন নম্বর ও বাসার ঠিকানা ফেসবুকে ব্যবহার করে হুমকি দিয়ে আসছিল।
শাওন জানান, গত ১১ অক্টোবর তিনি র্যাব সদর দফতরের এন্টি ক্রাইম জোনে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ করার ৩ দিনের মাথায় র্যাব ডা. এহসানুজ্জামান খানকে গ্রেফতার করে। ওই গ্রুপের সদস্যরা তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন এবং হত্যা ও দেশছাড়া করার হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন শাওন।
তিনি বলেন, ওই গ্রুপটি সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। তিনি সাইবার ক্রাইম অ্যাক্টে গ্রুপটি ও এর সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলেও জানান শাওন।
এম সোহায়েল আরো জানান, র্যাব গ্রুপটির ১২০০ সদস্যের বিরুদ্ধেই মামলা করে তাদেরকে গ্রেফতার করবে। তবে গ্রেফতারকৃত ডা. এহসানুজ্জামান খান জানান, তার এই সাইটের ৪০/৫০ জন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনি তাদেরকেই চেনেন। বাকি সাড়ে ১১শ’ জনকে চেনেন না। আর ১২০০ জনকেই খুঁজে বের করে গ্রেফতার করা হবে বলে জানান কমান্ডার এম সোহায়েল।
মেহের আফরোজ শাওন সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে আরো অভিযোগ করেছেন, অসুস্থ মস্তিস্কের মানুষ ছাড়া এ ধরনের কাজ করা কখনোই সম্ভব নয়।