নিজের সততা প্রমাণ এবং পদ্মাসেতুর তদন্ত নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে মন্ত্রীত্ব ছাড়তে প্রস্তুত সৈয়দ আবুল হোসেন। তিনি সব ষড়যন্ত্র পরিস্কার ও সমালোচনার জবাব দিতে পদ্মাসেতুর তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রীসভা থেকে দূরে থাকতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ করবেন বলে তার নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষকে ইঙ্গিত দিয়েছেন। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার মাদারীপুরে ৩টি কলেজের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই ইঙ্গিত দেন।

সূত্র জানায়, পদ্মাসেতু প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের অনুরোধে সৈয়দ আবুল হোসেনকে গত বছর যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তারপরও বিশ্বব্যাংক ঋণের টাকা ছাড় না দিয়ে আবারও কথিত দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত ও ব্যবস্থা নেয়ার জন্য লিখিত অনুরোধ জানায়। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় ও টিভি টকশোতে সৈয়দ আবুল হোসেনকে নিয়ে নানা কথা বলায় তিনি হতভম্ব ও বিস্মিত হন। তিনি বারবার শতভাগ স্বচ্ছ্বতা ও সততার দাবী করলেও তাকে নিয়ে লেখালেখি শেষ হয় না। দুর্নীতির বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন সৈয়দ আবুল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি দিয়েছে। এমনকি বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করলেও তাকে নিয়ে টিভি টকশোতে ব্যাপক সমালোচনা এবং পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হচ্ছে। তাই তিনি দুদকের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রীসভা থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে তার নির্বাচনী এলাকা মাদারীপুর-৩ আসনের কেন্দুয়া ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রামের এবিসিকে সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার কৃতী শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানানো উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বর্তমান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, ‘আমি মনে মনে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সিদ্ধান্তটি ঢাকায় গিয়ে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবো। যদি আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে রাজী করতে পারি তাহলে সে সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হবে। সেটি চেষ্টা করবো শুধু আমার সততা প্রমাণ করার জন্য।’

সমালোচকদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সাংবাদিক বন্ধুরা অনেক কিছু লিখেছেন, অনেক গুণীজন; যাদেরকে আমি শ্রদ্ধা করি তারাও গভীর রাতে অনেক কথা বলেছেন, অনেকে ষড়যন্ত্রের কথাও বলেছেন। সব ষড়যন্ত্র পরিস্কার হবে, আমি যদি আপনাদের (এলাকাবাসী) মত সাধারণভাবে কিছুদিন থাকতে পারি। যত তদন্ত হবে, সবকিছুই পরিস্কার হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘আমার মন্ত্রণালয় পরিবর্তন হয়েছে, এরপরেও অনেকে অনেক কথা বলেছেন। যদি সেই সুযোগ আমি করতে পারি এবং আমার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজী হন আমার অনুরোধে; তাহলে একবার আমি তাকে নিয়েই আবার কেন্দুয়াতে আসতে চাই, আমি দেখতে চাই- আমার হৃদয়ের সাথে কেন্দুয়াবাসীর বন্ধন কত অসীম, কত শক্ত।’

এর আগেরদিন সকালে শশীকর শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয় ও খাসেরহাট সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের অনুষ্ঠানে তিনি এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি কথা দিলাম- যেখানে যে অবস্থায় থাকি, আপনাদের অন্তরের মধ্যেই আছি। সরকারে থাকবো কি থাকবো না; সেটি আমার ইচ্ছা আর একটি ইচ্ছা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর। একটা মানুষের অবস্থানের পরিবর্তন হয়, একটি মানুষ তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারেন, আবার তার ওপরে যিনি সিদ্ধান্ত দেন, সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়। তবে আমি আমার নিজের ব্যাপারে সহসাই একটি সিদ্ধান্ত যাচ্ছি যা এখন বলতে পারছি না। তবে আমি যেখানে যে অবস্থানেই থাকি, আপনারা (এলাকাবাসী) আমাকে কাছে পাবেন। আমি আপনাদের অন্তরের মধ্যেই থাকবো।’

উল্লেখ্য এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সৈয়দ আবুল হোসেন এলজিইডি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী থাকার সময় তার বিরুদ্ধে পাসপোর্ট জালিয়াতির অভিযোগ উঠলে তিনি মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে মাদারীপুর ত্যাগ করেন।