নিহত সাংবাদিক মেহেরুন রুনীর গেঞ্জিতে (টি শার্ট) অন্যের ডিএনএ শনাক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরীক্ষাগারে খুন হওয়ার সময় রুনির পরনে থাকা টি-শার্ট থেকে সংগৃহীত উপাদান পরীক্ষা করে প্রাপ্ত ওই ডিএনএ খুনীর হতে পারে বলে ধারণা করছে মামলার তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ র্যাব।
র্যাব জানায়, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির মৃতদেহ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন আলামত পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাসায়নিক ও একটি ডিএনএ পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। তবে রুনির সংশ্লিষ্ট আলামতগুলোর পরীক্ষা ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। সাগরের সংশ্লিষ্ট আলামতগুলোর পরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাসায়নিক ও একটি ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল আসার পর খুনিদের শনাক্ত করতে মাঠে নামবে র্যাব।
আর রুনীর স্বামী সাংবাদিক সাগর সরওয়ার ও ছেলে মেঘের ডিএনএ পরীক্ষা চলছে বলে জানা গেছে।
সাগর রুনি হত্যা মামলা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে র্যাবের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন সোহায়েল।
যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, বেশির ভাগ নমুনাতেই একাধিক ব্যক্তির ছাপ রয়েছে। এর মধ্যে রুনির টি-শার্ট থেকে একজনের পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকাণ্ডের সময় যে ধস্তাধস্তি হয়েছে, তাতেই রুনির টি-শার্টে ওই ব্যক্তির চুল ও হাতের ছাপ লাগে। সাগরের হাত ও পা বাঁধার কাপড়ের নমুনা থেকেও অন্য কারও ডিএনএ শনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এসব নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য দুই দফায় যুক্তরাষ্ট্রের রাসায়নিক ও ডিএনএ পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। এরপর গত ১২ জুন প্রথম দফায় পাঠানো হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত একটি ছুরি, ছুরির বাঁট, সাগরের মোজা, একটি কম্বল, সাগরের পরনের প্যান্ট, রুনির পরনের প্যান্ট ও অন্য কাপড়ের নমুনা। গত ১৭ জুলাই দ্বিতীয় দফায় পাঠানো হয় হত্যাকাণ্ডের সময় যে কাপড় দিয়ে সাগরের হাত ও পা বাঁধা হয়েছিল, সেই কাপড় এবং রুনির টি-শার্ট।
কমান্ডার এম সোহায়েল বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি রাসায়নিক ও ডিএনএ পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়া যেতে পারে। এর আগে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করার কাজ শুরু হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে মিলিয়েই অপরাধী শনাক্ত করার চেষ্টা করা হবে। তিনি আরও বলেন, প্রথম শ্রেণীর একজন কর্মকর্তাকে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আরও তিনজন কর্মকর্তাকে তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণও করছেন।
র্যাব সূত্র জানায়, এ মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাগর-রুনির সন্তান মেঘের কাছ থেকে মনোরোগ চিকিৎসকদের সহায়তা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তিন দফা মেঘের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বাসায় ছিল তাদের একমাত্র সন্তান মেঘ। প্রথমে সাগর রুনি হত্যা মামলা তদন্তের ভার ডিবির হাতে ছিল। তিন মাস ডিবি এ মামলায় তেমস কিছু করতে না পারায় হাইকোর্টের নির্দেশে ১৯ মে র্যাব সাগর রুনি হত্যা মামলার তদন্ত শুরু করে। সাগর রুনির ক্রাইম সিন নষ্ট হওয়ায় র্যাবের পক্ষে খুনি শনাক্তকরণ নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। গত ২৬ এপ্রিল ভিসেরা আলামতের জন্য দুজনের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। তদন্ত শুরুর পর এখনো এ মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে চারজনকে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার করে।