স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দিন খান আলমগীর মঙ্গলবার বিকেলে ঘোষণা দেন, সাগর-রুনি হত্যার প্রধানতম সন্দেহভাজন হুমায়ূন ওরফে এনামুলকে ধরতে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।
 

প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, হুমায়ূন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড। তিনি পলাতক রয়েছেন। ৭ জনের একটি খুনি দল সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনিকে হত্যা করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে র‌্যাবের তদন্ত কমিটির দেওয়া রিপোর্টে এই তথ্য পাওয়া গেছে। হত্যাকারী দলে চার জন পেশাদার খুনি ছিলো। এরা হচ্ছে- বকুল, রফিক, মিন্টু ও সাঈদ।

সাগর রুনি এই হত্যাকারীরাই পরে মহাখালী বক্ষব্যাধী হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নারায়ণ চন্দ্র নিতাইকে খুন করে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এই  ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী আরও জানান, সাগর-রুনিদের বাড়ির দুই নাইট গার্ড হুমায়ূন ওরফে এনামুল ও রুদ্র পলাশ খুনের ঘটনায় জড়িত। এছাড়া ড. নিতাইয়ের গাড়ির চালকও এই ঘটনায় জড়িত। তবে সঙ্গে তানভীর নামে একজন পারিবারিক বন্ধুও।

সন্দেহভাজনদের মধ্যে হুমায়ূন ওরফে এনামুল ছাড়া বাকি সকলেই আটক রয়েছেন বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এসময় তিনি হুমায়ূনকে ধরার জন্য ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন।

এই খুনের কারণ কি ছিলো জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সুনির্দিষ্ট করা যায়নি। তবে আমরা ভাড়াটে খুনিদের কাজ এবং পরিচিতদের কাণ্ড এই দুভাবেই ঘটেছে পারে বলে ধারণা করছি। তবে ডিএনএ টেস্টে আরো অপরাধীর সাজুয্য পেলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, স্বরাষ্ট্রসচিব সি কিউ কে মোস্তাক,  র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের প্রধান এস এম সোয়াহেলসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাগর-রুনি হত্যা রহস্য নিয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় কথা বলবেন জানিয়েছিলেন সাংবাদিকদের।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসময় বলেন, “সকল সন্দেহের উর্ধ্বে ও সুষ্ঠুভাবে আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে এ পর্যন্ত সাতজন অপরাধীকে শনাক্ত ও গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়েছি। এরা হলেন, রফিক, মিন্টু, সাইদ, বকুল ও ডা. নিতাইয়ের গাড়িচালক কামরুল। সাগর-রুনির পারিবারিক বন্ধু তানভীরকেও অপরাধী হিসেবে হিসেবে শনাক্ত করেছি। এর বাইরে ওই বাসার দুই প্রহরীর একজন রুদ্র পলাশকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরেকজন প্রহরী হুমায়ুন ওরফে এনামুল পলাতক রয়েছে। তাকে কেউ ধরিয়ে দিলে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “অপরাধীদের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে। তদন্তে ডিএনএর সাজুয্য বিচার বিশ্লেষণে আরো যদি অপরাধী পাওয়া যায় তাহলে তাদেরও আইনের মাধ্যমে আদালতে নিয়ে যেতে সক্ষম হবো।”

 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা জজ মিয়ার মতো নাটক সাজাতে চাই না। নাটক সাজতে আসিনি। আওয়ামী লীগ সরকার এ ধরণের কাজ করে না। জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে।”

 

ডা: নিতাইয়ের খুনিরাই সাগর-রুনিকে হত্যা করেছে বলে জোর দিয়ে উল্লেখ করেন মন্ত্রী। 

 

খুনি ভাড়াটিয়া কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন “ভাড়াটিয়াও হতে পারে।” ডা. নিতাইয়ের খুনিরা সাগর-রুনিকে হত্যা করেছে, এতে আইন-শৃংখলা বাহিনী ব্যর্থ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “অপরাধীরা অপরাধ করে একস্থান থেকে আরেক স্থানে চলে যায়।”

 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সাগর-রুনির হত্যা রহস্য উন্মোচন করতে আমরা শুরু থেকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও আন্তরিকতা দিয়ে তদন্ত করছি। সর্বোচ্চ আদালত র‌্যাবকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে র‌্যাবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা অত্যাধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। আমেরিকার দুটি ল্যাবরেটরিকে তদন্তকাজে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।” 

 

গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি নিজ ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সাংবাদিক সমাজ সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন-কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন।

সাংবাদিকদের আন্দোলন-কর্মসূচির মুখে সর্ব শেষে গত ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের রহস্য আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে উন্মোচন করা হবে। আগামী কাল বুধবার সেই নির্ধারিত সময়ের একদিন আগেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই সাংবাদিক দম্পতির হত্যা রহস্য নিয়ে কথা বললেন।