কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দুটি প্রবেশ পথে দীর্ঘ দুই সারিতে বিষণ্ন সব মুখ। কদম, চাঁপা, গোলাপ হাতে তারা জড়ো হয়েছেন প্রিয় লেখক-নাট্যকার-চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে।

লেখকের মৃতদেহ শহীদ মিনারে আনা হবে জেনে সকাল ৮টায় সেখানে উপস্থিত হন লালবাগের শামীম আহমেদ।

“আমি তার লেখা সব বই পড়েছি। তার হিমু সিরিজের বইগুলো আমার সবচেয়ে প্রিয়। কিন্তু তিনি তো আর লিখবেন না”, আবেগে রুদ্ধ হয়ে আসে শামীমের কণ্ঠ।

সোমবার সকালে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে লেখকের মৃতদেহে দেশে পৌঁছানোর পর ১০টা ২২ মিনিটে তার কফিনবাহী অ্যাম্বুলেন্স শহীদ মিনারে পৌঁছায়। শহীদ মিনার চত্বর তখনই লোকে লোকারণ্য।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভক্ত-অনুরাগীদের এই ভিড় বাড়তেই থাকে। এরই মধ্যে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে যায়, আবার রোদ ওঠে। ফুলে ফুলে ভরে উঠতে থাকে হুমায়ূনের কফিন।

‘এই দিন দিন নয়, আরো দিন আছে’ গানটি গেয়ে উঠে কুদ্দুস বয়াতী বলেন, “এই গান হুমায়ূন আহমেদের লেখা। এই গান গেয়েই আমি কুদ্দুস বয়াতি হয়েছি। উনি মরেননি, উনি আমাদের হৃদয়ে আছেন।”

নতুন ধারার চলচ্চিত্রের জন্য হুমায়ূন আহমেদ কাজ করে গেছেন উল্লে¬খ করে চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, “সুস্থ ধারার চলচ্চিত্রের জন্য আমরা যারা কাজ করে আসছি, হূমায়ূন আহমেদ তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি মানুষকে হলমুখী করেছিলেন।”

শহীদ মিনারে ঢোকার জন্য লাইনে দাঁড়ানো ইডেন ছাত্রী স্বপ্নীল জানালেন, সকালে মিরপুরের শেওড়াপাড়া থেকে তিনি এসেছেন প্রিয় লেখককে শ্রদ্ধা জানাতে।

“হুমায়ূন ছিলেন আমার স্বপ্নের নায়ক। বুঝতেই পারছেন আমি তার কতোটা ভক্ত।”

চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের বেলভ্যু হাসপাতালে মৃত্যু হয় হুমায়ূন আহমেদের। বৃহদান্ত্রের ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য নিউ ইয়র্ক যান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী দৃষ্টি আর দিশা হাতে চাঁপা ফুল নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দর্শক সাড়িতে অবস্থান করেন।

দৃষ্টি বলেন, “প্রিয় লেখকের মৃত্যুতে খারাপ তো লাগছেই, কিন্তু সবচেয়ে খারাপ লাগছে মিসির আলী, হিমু, শুভ্রর মতো চরিত্রগুলোর নতুন কোনো কাহিনী আমরা আর পাব না। অথচ আমরা এগুলো পড়তে পড়তেই বড় হয়েছি।”

ফুল দিয়ে ফেরার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদি বলেন, “আমরা এক পরম আপনজনকে হারিয়ে ফেললাম।”