তীব্র শীত উপেক্ষা করে সকাল থেকে হাজার হাজার মানুষ ব্যানার-প্লাকার্ড ধরে হাতে হাত মিলিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে। তাদের দাবি, মুন্সীগঞ্জের আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণ করতেই হবে। দেশের অগ্রগতির জন্যই আন্তর্জাতিক মানের এ বিমানবন্দরটি নির্মাণ জরুরি।

বিমানবন্দরের দাবিতে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মানববন্ধনে আগহী এক ব্যক্তি জানান, বিমানবন্দর হলে ভালো হবে। এই এলাকা তো উন্নত হবেই, দেশের জন্যও ভালো। তিনি জানান, মুন্সীগঞ্জের খুব কম মানুষই আছে যারা বিমানবন্দর নির্মাণের বিরোধিতা করছেন। তাছাড়া প্রায় সবাই আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দরের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। মানববন্ধনে মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। ফুলহাট গ্রামের রহিম বলেন, আড়িয়ল বিলে অনেক খাসজমি আছে। এ কারণে এখানে কম খরচে সরকার জমি নিতে পারবে। আমি মনে করি বিমানবন্দরের জন্য আড়িয়ল বিলই হচ্ছে উপযুক্ত স্থান। বেলা ১১টার কিছু আগে মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপস্থিত হন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর চৌরাস্তায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, বুকের রক্ত দিয়ে হলেও আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণ করবই। এই এলাকার একজন মানুষও যদি জীবিত থাকে তবে বিমানবন্দর হবেই। খুব কম সংখ্যক মানুষ বিমানবন্দর নির্মাণের বিপক্ষে_ এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এলাকার ৯৯ ভাগ মানুষই বিমানবন্দর নির্মাণের পক্ষে। যারা বিরোধিতা করছে, তারা বাংলাদেশের ভালো চায় না। তিনি বলেন, বিএনপির আমলে আড়িয়ল বিলের হাজার হাজার একর জমি দখল করা হয়েছে। এ সম্পত্তি হাত ছাড়া হওয়ার ভয়ে মহলটি বিমানবন্দর নির্মাণের বিরোধিতা করছে। কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আড়িয়ল বিলে বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর নির্মাণ করবই। বিমানবন্দর হলে আড়িয়ল বিল হবে দেশের উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু এমন মন্তব্য করে আবদুল মান্নান খান বলেন, বিমানবন্দরের পাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্যাটেলাইট সিটি গড়ে তোলা হবে। এখানে সার্বক্ষণিক পানি-গ্যাস-বিদ্যুতের সুবিধা থাকবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি হবে। প্রতিষ্ঠা করা হবে আইটি ভিলেজ ও পর্যটন কেন্দ্র। বিমানবন্দরের জন্য জমি নির্ধারণের কাজ শেষ পর্যায়ে। যত দ্রুত সম্ভব বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে স্বাগত জানান মানববন্ধনে উপস্থিত স্থানীয় জনগণ। তারাও মনে করেন, বিমানবন্দর হলে তাদেরই লাভ। মুহুর্মুহু করতালি আর স্লোগানে তারা প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে স্বাগত জানান। শ্রীনগর চৌরাস্তায় মন্ত্রীর বক্তব্য শেষ হওয়ার পর শহীদুল নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। অত কিছু বুঝি না। তবে এটুকু বুঝি বিমানবন্দর হলে আমাদের কাজ করে খাওয়ার সুযোগ আরও বাড়বে। সিরাজদিখান বাজারে বসে কথা হয় নূর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, তার শ্বশুরবাড়ি আড়িয়ল বিলে। শ্বশুরের প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের জমি আছে বিলে। সরকার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিলে তিনিও চান বিমানবন্দর হোক। বেলা ১১টায় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুই ধারে শুধু মানুষ আর মানুষ। হাতে ব্যানার-প্লাকার্ড। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণ করতে হবে’, ‘এয়ারপোর্ট চাই, এয়ারপোর্ট চাই আড়িয়ল বিলে এয়ারপোর্ট চাই’ প্রভৃতি স্লোগান শোভা পাচ্ছিল ব্যানার-প্লাকার্ডে। মানববন্ধনের পাশাপাশি এ সময় মিছিল করতেও দেখা যায়। মানববন্ধনে সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি এমপি, সুকুমার রঞ্জন ঘোষ এমপি, সিরাজদিখান উপজেলা চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ বক্তৃতা করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন। দুপুরে যখন প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান ফিরে আসেন তখনও রাস্তার পাশে মানুষ আর মানুষ।