একটা নাইটি! তা কেবল খোলা আর পরা। পরা আর খোলা। আর, ওই খোলা-পরার মাঝের সময়টুকুতে কী? ওই সময়টাই তো আসল। তখনই তো রাতে রঙ লাগে আর মনে গান জাগে। পাশাপাশি, দুটো মানুষ চলে আসে একে অপরের খুব কাছাকাছি।
এতটাই কাছে যে, তখন আর শুধুই শরীর নয়; দেখা হয়ে যায় আরও অনেকটা বেশি। রাতের আঁধার ঢেকে রাখে যা কিছু গোপন, সযত্নে তা লুকিয়ে রাখে বাইরের মানুষগুলোর কাছ থেকে।
কিন্তু নাইটি খোলা-পরার মাঝে আর স্বস্তিতে থাকতে পারে না কাছের মানুষগুলো। তারা তখন ছটফট করে, নগ্নতা প্রকট হয়ে দেখা দেয় শরীর ছুঁয়ে মনেও।
একটা রাতপোশাক ঘটাতে পারে এমনতর বিপর্যয়ও?
অন্তর্বাস হলেও না হয় তা যৌন ধাক্কা দিয়ে জ্বালিয়ে দিতে পারে প্রাণ মন; কিন্তু নাইটির মতো একটা নিরীহ আটপৌরে পোশাক কি সত্যিই এমন ক্ষমতা ধরে? হয়, হয়, বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু রহস্যই বা আমরা জানি? নাইটি যদি ভৌতিক হয়, তার ভূতপূর্ব মালকিন যদি হন ওই ভূতলোকেরই বাসিন্দা- তবে চোখ কপালে তোলার কারণ আছে বইকি!
কেননা ওই ভুতুড়ে নাইটিটা পরলেই যে অতৃপ্ত প্রেম এসে ধাক্কা দেবে দোরে আর দোরগোড়ায় হামলে পড়বে পুরুষেরা।
তা, এহেন ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী কারা? সাক্ষীরা হলেন পাওলি দাম, তনুশ্রী, জুন মাল্য, লকেট চট্টোপাধ্যায়, প্রিয়াঙ্কা, মিস জোজো, তনিমা সেন আর লাবণি সরকার। তাঁরা প্রত্যেকে এই নাইটি পরবেন এবং হাতেনাতে দেখবেন এর কামাল।
আর যে পুরুষদের উপর ঝড় বয়ে যাবে এই নাইটির দৌলতে, তাঁরা হলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, রাহুল, নীল মুখোপাধ্যায়, ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় আর বিশ্বনাথ বসু। বলাই বাহুল্য এ সবই ঘটবে এক ছায়াছবির গল্পে। ছবির নাম ‘অভিশপ্ত নাইটি’, পরিচালক বিরসা দাসগুপ্ত। ছবিটি প্রযোজনা করছেন শ্রীকান্ত মোহতা।
তা, ছবিটার গল্পটা কী? একটা ভুতুড়ে নাইটির হাত ঘোরা?
‘উঁহু, বরং বলা যেতে পারে- আ নাইটি ইন সার্চ অফ লাভ’, জানাচ্ছেন খোদ পরিচালক।
তো, ছবির গল্পে পাওলি দাম এই ছবিতে এক আশির দশকের ক্রুনার। বারে গান গাওয়াই তাঁর কাজ। এহেন মোনিকা এক বড়লোককে বগলদাবা করে ছুটি কাটাতে যায় পুরী; সঙ্গে থাকে ওই নাইটি। তার ছুটিটা ভাল কাটে না। প্রেমে অতৃপ্ত হয়ে সে বিদায় নেয় পৃথিবী থেকে।
অন্যদিকে, গ্রাম থেকে শহরে নায়িকা হতে আসেন তনুশ্রী, ওই নাইটি গায়ে চড়াতেই শুরু হয় প্রেমের লীলা। আর নায়িকার সাক্ষাৎকার নিতে এসে সেই জালে জড়িয়ে যান সাংবাদিক পরমব্রত। আবার বহু বছর পরে ওই পুরীতেই যায় দুই সদ্য বিয়ে সারা ছেলে-মেয়ে- রাহুল আর প্রিয়াঙ্কা।
তারাও পড়ে ওই নাইটির খপ্পরে। আবার, দত্তবাড়িতে শাশুড়ি-বউমা, যথাক্রমে তনিমা আর লকেট পালা করে ওই নাইটিটা পরতেই শুরু হয় গেরো! জুন আর বিশ্বনাথ, লাবণি সরকার আর ভাস্করের কপালেও নাইটির দৌলতে খুব একটা আলাদা কিছু ঘটে না।
তা, এতগুলো মানুষের জীবনে ধুন্ধুমার ফেলে দিচ্ছে যে একখান নাইটি, তার রঙটা ঠিক কী? ‘হট পিঙ্ক’, বিন্দুমাত্র না ভেবে চটজলদি জানালেন বিরসা। ভালবাসা যেমন, নাইটির রঙটাও ঠিক তেমন। ‘আসলে এই ছবিতে নাইটিটাই তো আসল চরিত্র, সেই ভালবাসা খুঁজে বেড়ায়’, আরও একটু খেই ধরিয়ে দিলেন পরিচালক।
একটু থেমে আরও জানালেন তিনি, ‘আমার ছবিতে সব মিলিয়ে ১১০টি চরিত্র থাকছে। কোথাও কোথাও ৪০জন বলে ভুল করা হলেও তা নয়। ফলে রীতিমতো একটা দলের উপর ছাপ ফেলবে অভিশপ্ত নাইটি’!
এই জায়গায় এসে একটা খটকা নিয়ে দ্বারস্থ হতেই হল পরিচালকের। সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর ‘প্যান্টি’ গল্পটার সঙ্গে কি কোথাও মিল আছে ‘অভিশপ্ত নাইটি’-র কাহিনির? সেখানেও তো অন্তর্বাসটি অতৃপ্ত ভালবাসাকেই তুলে ধরে!
‘না, না, প্যান্টির সঙ্গে নাইটির কোনও মিল নেই’, হাসতে হাসতে জানালেন বিরসা।
‘আসলে বাঙালির তো খাওয়ার মধ্যে ভাত আর পরার মধ্যে নাইটি- সেইজন্যই ছবিতে নাইটি-ই বেছে নেওয়া হয়েছে। প্যান্টি পরার পর গল্পের মেয়েটি প্যান্টির মালকিনকে বুঝতে পারলেও এখানে কিন্তু নাইটি পরে কেউ স্বস্তিতে থাকে না। বরং সবাই একটা গিল্টে ভোগে- হে ঈশ্বর, এ আমি কী করলাম জাতীয় গিল্ট। অনেকে তাই নাইটিটা ছেড়ে সঙ্গে সঙ্গে স্নানও করে নেয়। আর প্যান্টি গল্পে প্রতিহিংসার জায়গা থাকলেও নাইটি কিন্তু কেবল ভালবাসা নিয়ে! যে মুহূর্তে একজন মানুষ ভালবাসা পেয়ে যায়, তখন আর তার উপর নাইটির জাদু খাটে না! এমনকি ছবির শেষে নাইটি ভালবাসাও খুঁজে পায়’, বিরসা উবাচ।
তাহলে আর কী! আপাতত শুধুই অপেক্ষা ছবিটি তৈরি হওয়ার। তা, ছবির কাজ শুরু হচ্ছে কবে থেকে? ‘এই তো ১০ তারিখ থেকে কাজ শুরু করে দেব’, সহাস্য জবাব পরিচালকের।