মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের (জিপি) প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা(সিসিও) কাজী মনিরুল কবির সংস্থার চাকরি ছাড়ছেন। আগামী মাসেই তিনি গ্রামীণফোনের চাকরি থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন। যোগ দিচ্ছেন গুগলে। মনিরুল কবিরের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র তার চাকরি ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে গ্রামীণফোনের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান সৈয়দ তাহমিদ আজিজুল হক বাংলানিউজকে জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। আর ধরনের যদি কিছু হয়ে থাকে তাহলে তা গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ নিজে থেকেই গণমাধ্যমকে জানাবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের এতটা আগ্রহ দেখানোর কিছু নেই। সাম্প্রতিককালে গ্রামীণফোনে গণছাঁটাইয়ের নেপথ্যে মনিরুল কবির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এই গণছাঁটাই থেকে রেহাই পাননি অন্ত:সত্ত্বা নারী কর্মীও। এ ঘটনার পর তাকে নিয়ে গ্রামীণফোনে কর্মীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত গুগল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বহুজাতিক কোম্পানি। গুগল আগামী মাসেই বাংলাদেশে তারা অফিস খুলছে। এ ব্যাপারে মনিরুল কবিরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। জানা গেছে, গুগল বিশ্বের ৪৯টি দেশে ইউটিউবের স্থানীয় সংস্করণ সেবা দিয়ে থাকে। সম্প্রতি মহানবী (স:)কে কটাক্ষ করে তৈরি করা ইনোসেন্স অব মুসলিম’ ছবিটি ইউটিউবে আপলোড হওয়ার এ নিয়ে মুসলিমবিশ্বসহ বাংলাদেশে ব্যাপকবিক্ষোভ হয়। এরপর সরকার পুরো ইউটিউবই বন্ধ করে দেয়। তবে ভারত ও ইন্দোনেশিয়া পুরো ইউটিউব বন্ধ করেনি। স্থানীয় সংস্করণের মাধ্যমে তারা শুধু ছবিটি নিষিদ্ধ করেছে। যদি ইউটিউবের স্থানীয় অফিস বাংলাদেশে থাকতো সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র ইনোসেন্স অব মুসলিম ছবিটি নিষিদ্ধ করা সম্ভব হতো। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন বাংলাদেশে অফিস খুললে এ বিষয়টির সমাধান হতে পারে। অভিযোগ রয়েছে, গ্রামীণফোনে বর্তমানে যে গণছাঁটাই হয়েছে তার অন্যতম নেপথ্যের নায়ক ছিলেন মনিরুল কবির। চাকরিচ্যুতির নায়ক হওয়ায় মনিরুল কবির তার কমিনিউকেশন বিভাগের ২০ জন কর্মকর্তা কাউকে চাকরিচ্যুৎ করেননি। চাকরিচ্যুতিতে মনিরুলের হাত রয়েছে বলেই তার প্রভাববলয়ে থাকা কাউকেই ছাঁটাই করা হয়নি। তার সিন্ডিকেটকে শক্তিশালী করতেই তিনি বেছে বেছে চাকরিচ্যুতির তালিকা করেন। নতুবা চাকরি রক্ষার কথিত পরীক্ষায় ২০ নম্বরের মধ্যে ১৪ পেয়েও একজন চাকরিহারিয়েছেন। অন্যদিকে একই পরীক্ষায় ৭ নম্বর পেয়েও চাকরিতে বহাল রয়েছেন কেউ কেউ। গ্রামীণফোনে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো (ব্যাট) গ্রুপের আধিপত্য তৈরির পেছনেও মনিরুল কবির অন্যতম ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করেছেন। মূলত ২০০৮ থেকে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো (ব্যাট) থেকে আসা কর্মকর্তাদের সংখ্যা গ্রামীণফোনে বাড়তে থাকে। মনিরুল কবিরও ওই বছরই গ্রামীণফোনে যোগ দেন। এরপর থেকেই গ্রামীণে সক্রিয় হয়ে ওঠে ব্যাট গ্রুপ। তবে মনিরুল কবির বরাবরই তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কিছুদিন আগে এই ব্যাটেরই এক কর্মকর্তার কারণে চাকরিচ্যুৎ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল মনিরুল কবিরের। ওই ধাক্কা সামলে তিনিই এখন হয়ে উঠেছেন গ্রামীণফোনের সর্বেসর্বা। ঠিক এই মুহূর্তে তার গ্রামীণফোন ছাড়া নিয়ে তাই বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে গ্রামীণফোনে তারই একজন ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানে তার বেশিদিন চাকরি করার অতীত রেকর্ড নেই। বলতে পারেন এ কারণেই তিনি গ্রামীণফোন ছাড়ছেন। অন্য এক কর্মকর্তা অবশ্য বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, এখান থেকে মরিুল কবিরের যা পাওয়ার সবই পেয়েছেন। এবার আরো বেশি কিছু পাওয়ার আশায় তার এই প্রস্থান।