নিরাপত্তা বাহিনীর জোর তৎপরতার মধ্যেও ভারতের আসাম রাজ্যে জাতিগত দাঙ্গা অব্যাহত রয়েছে। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে নতুন নতুন এলাকায়।

আসামের কোকরাঝার ও চিড়ং জেলায় বুধবার নতুন আটটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে আদিবাসী বোদো স¤প্রদায় ও সংখ্যালঘু বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে গত সাতদিন ধরে চলমান সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৪১ জন নিহত হয়েছে। বুধবার রাতে বাকসা জেলায় নতুন করে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় অন্তত তিন জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে এনডিটিভি জানিয়েছে।

আসামে এ জাতিগত দাঙ্গার জন্য বাংলাদেশি অভিবাসীদের দায়ী করে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ভারতের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গোগোই বলেছেন, “নতুন করে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে আশ্রয় শিবিরে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। মূলত আতঙ্কিত গ্রামবাসীদের পালিয়ে আসার কারণে এটা হয়েছে।”

গুজবে কান দিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার তার দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত কোকরাঝার জেলা পরিদর্শনের কথা রয়েছে।

কোকরাঝারে সাময়িক বিরতি দিয়ে ফের অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। এছাড়া পাশ্ববর্তী জেলা চিড়ংয়ে নতুন করে তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পর সেখানে বোদো ও মুসলিম অধুষ্যিত ছয়টি গ্রামে দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। চিড়ংয়ের গারুভাতা, নেপালপাড়া ও নাঙ্গলবাড়ী গ্রামে নতুন করে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে বলে টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে।

আসামের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস পোগাত টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে বলেছেন, “আজ সকালে সৈন্য মোতায়েন করায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আজকে কোনো জায়গায় সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।”

সহিংসতা ছড়িয়ে পড়া চারটি জেলায় সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ দাঙ্গার কারণে আসামের সা¤প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ গৃহহীন হয়েছে। কর্মকর্তাদের হিসাবে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা ছড়িয়ে পড়া কোকরাঝার, চিড়ং ও ধুব্রি জেলায় এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে ১২৮টি আশ্রয় শিবিরে অবস্থান নিয়েছে।

আতঙ্কিত গ্রমাবাসী বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে অথবা কাছাকাছি যে এলাকায় তাদের গোষ্ঠীর মানুষ বেশি রয়েছে সেখানে পাড়ি জমা”েচ্ছ।

জুলাইয়ের শুরুর দিকে দুই অভিবাসী মুসলিম নিহত হওয়ার পর দুই স¤প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। এরপর গত ১৯ জুলাই আরো দুইজন নিহত হয়। কিন্তু পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় মুসলিমদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

২০ জুলাই বোদো লিবারেশন টাইগার্সের সাবেক চার সদস্য নিহত হয়। এরপর থেকে মুসলিম অভিবাসীদের ওপর হামলা চালানো শুরু করে বোদো স¤প্রদায়ের সদস্যরা। তখন থেকে দুই স¤প্রদায়ের মধ্যে এ সহিংসতা চলছে।