আওয়ামী লীগ আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য হাইকোর্টের রায়ের ধুয়া তুলে সংবিধান সংশোধন করেছে। অথচ হাইকোর্টের রায় এখনও পূর্ণাঙ্গ প্রকাশ পায়নি। রায়ে আরও দুই টার্ম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার সুযোগ থাকলেও তারা তড়িঘড়ি করে জাতীয় সংসদে তত্ত্ব্বাবধায়ক সরকারের বিল বাতিল করেছে। এদেশে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, করতে দেওয়া হবে না। খালেদা জিয়া বলেন, এ সরকারের আর এক মুহূর্ত ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। সরকারের পতন ঘটাতে সারাদেশ থেকে ঢাকা চলো কর্মসূচি দেওয়া হবে। ঢাকা ঘেরাওয়ের মধ্যদিয়ে সরকারকে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বচনের ব্যবস্থা করা হবে।

গতকাল বুধবার উত্তরবঙ্গ অভিমুখে বিএনপির রোডমার্চের সমাপনী জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সরকারি কলেজ মাঠে চার দল জনসভার আয়োজন করে। এর আগে নওগাঁর এটিম হাইস্কুল মাঠে একমাত্র পথসভা হয়। জনসভার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জে সার্কিট হাউসে বিশ্রাম শেষে রাতেই ঢাকায় ফেরেন তিনি।

খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘনঘন বিদেশ সফর করছেন, তার সরকারের দেশপ্রেম বলতে কিছুই নেই। এমনকি বিদেশিদের স্বার্থরক্ষায় ব্যস্ত রয়েছেন, এ কারণে তিনি তার ছেলের সঙ্গে বিদেশি মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এতেই বোঝা যায় তার দেশপ্রেম।

তিনি বলেন, সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। বর্তমান কমিশন নিরপেক্ষ নয়। তারা ভোট কারচুপি করে এ সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। তিনি আরও বলেন, দলীয় ব্যক্তিদের নিয়ে বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার করছে। বিচার করতে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। এটা বিচারের নামে প্রহসন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আগে স্বাধীনতা-পরবর্তী যারা ৪০ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে, তাদের বিচার আগে করতে হবে। মহাজোট সরকারের অভ্যন্তরে অনেক যুদ্ধাপরাধী রয়েছে। তাদের বিচার না করে উল্টো অন্যদের বিচার করা সমীচীন নয়।
ট্রানজিটের নামে ভারতকে স্থায়ীভাবে করিডোর দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, আগে বলা হয়েছিল ট্রানজিট পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জনগণ ট্রানজিটের নামে করিডোর বাস্তবায়ন হতে দেবে না। তিনি বলেন, সরকার বলেছিল ট্রানজিট দিলে দেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে। কিন্তু এখন দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সঠিত তদন্ত হয়নি। প্রকৃত খুনিদের অনেককে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ সরকারের ছত্রছায়ায় রয়েছে। বিডিআরের পোশাক ও নাম পরিবর্তন করা হলেও সীমান্ত আজ অরক্ষিত। দেশ পরিণত হয়েছে ভারতের বাজারে।
বিএনপি চেয়ারপারসন প্রশ্ন রেখে বলেন, দেশের অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, এমনকি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যদি অন্য দেশ নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকল কোথায়? পাকিস্তানের শৃঙ্খল থেকে দেশ স্বাধীন করেছি ভারতের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার জন্য নয়। এ শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকলে শিক্ষিত হয়েও কিছু করা সম্ভব হবে না। যে দেশের মানুষ রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করেছে তাদের দাবিয়ে রাখা যাবে না। প্রয়োজনে আরেকটি যুদ্ধ করে দেশকে শৃঙ্খলমুক্ত করব।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য আদালতের দোহাই দিয়ে সংবিধান পরিবর্তন করেছে। কিন্তু রায় এখনও বেরই হয়নি। সংক্ষিপ্ত রায় অনুযায়ী আরও দু’বার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে বলা হলেও সরকার একতরফাভাবে গায়ের জোরে সংবিধান থেকে এ প্রথা তুলে দিয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে ২৭ অক্টোবর নয়াপল্টনে চার দলের সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া। এর আগে ১০ ও ১১ অক্টোবর সিলেট অভিমুখে প্রথম রোডমার্চ করে বিএনপি। ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও রোডমার্চ করেছিল দলটি।

জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক শাজাহান মিঞার সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম এমপি, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক এমপি, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইবরাহিম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলু, আমানউল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আশিফা আশরাফি পাপিয়া এমপি, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা আলহাজ আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।