ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ১৯৬৬ সালের ৬ জুন নারায়ণগঞ্জের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাতা- মমতাজ বেগম ও পিতা সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ চুনকা।

চুনকা পরিবারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে ডা. আইভী হলেন প্রথম সন্তান। তিনি দেওভোগ আখড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরী স্কুলে ভর্তি হন এবং ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। তারপর তিনি মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৭৯ সালে ট্যালেন্টপুলে জুনিয়র স্কলারশিপ পান এবং ১৯৮২ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় স্টারমার্কসহ উত্তীর্ণ হন।

তিনি ১৯৮৫ সালে রাশিয়ান সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে শিক্ষাগ্রহণের জন্য ওডেসা পিরাগোব মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন এবং ১৯৯২ সালে কৃতিত্বের সাথে এমডি ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৯২-৯৩ সালে ঢাকা মিডফোর্ট হাসপাতালে ইন্টার্নি সম্পন্ন করেন। ডা. আইভী তার সুদীর্ঘ শিক্ষা জীবনের পর ১৯৯৩-৯৪ সালে মিডফোর্ট হাসপাতালে এবং ১৯৯৪-৯৫ সালে নারায়ণগঞ্জ ২০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে অনারারি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন। ডা. আইভী ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর রাজবাড়ী নিবাসী কাজী আহসান হায়াৎ-এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামী কাজী আহসান হায়াৎ বর্তমানে কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে নিউজিল্যান্ডে কর্মরত আছেন।

 

পারিবারিক জীবনে তিনি দুই পুত্র সন্তানের জননী। কাজী সাদমান হায়াত সীমান্ত (জন্ম ৫ মে ১৯৯৮) ও কাজী সারদিল হায়াত অনন্ত (জন্ম ২০ জুন ২০০২)। তিনি ১৯৯৫ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি সায়েন্সে অধ্যয়ন শুরু করেন। তিনি অধ্যয়নরত অবস্থায় ২০০২ সালের ডিসেম্বরে দেশে ফিরে আসেন। তার এই দীর্ঘ প্রবাস জীবনে তিনি দেশের মানুষ ও সর্বোপরি নিজের সেই পরিচিত শহর ও শহরবাসীর জন্য এক প্রগাঢ় হৃদয়ের আকর্ষণ অনুভব করেন। তিনি অধ্যয়নকালীন সময়ে ও প্রবাস জীবনের ফাঁকে ফাঁকে ছুটে এসেছেন জন্মভূমিতে। এছাড়া তিনি গরীব ও দুঃখী লোকদের বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং আর্থিকভাবে সাহায্য করেন। তার এই কর্মকাণ্ডে পৌরপিতা আলী আহাম্মদ চুনকার দানশীলতা, মানবপ্রেম ও একই সঙ্গে মানব সেবার প্রতিফলন ঘটে।

তিনি স্কুল ও কলেজ জীবন থেকে বাবার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন। ১৯৯৩ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদিকা ছিলেন। ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তার সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। তিনি ১৬ জানুয়ারি ২০০৩ তারিখে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম মহিলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ২০১১ সালের ২৭ জুন পর্যন্ত তিনি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে আছেন।

তিনি আলী আহাম্মদ চুনকা ফাউন্ডেশন এবং নারায়ণগঞ্জ হার্ট ফাউন্ডেশন-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)-এর নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়কের দায়িত্বে আছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত আছেন।