গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা যে কোন মূল্যে জনসভা সফল করার ঘোষণা দিয়েছেন। যত বাধা-বিপত্তিই আসুক আজকের জনসভা স্মরণকালের সবচেয়ে বড় আকার ধারণ করবে বলে দাবি করেছে বিএনপি।
নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এ দাবি করেন। তিনি বলেন, সরকার পল্টনে জনসভা আয়োজনের ও জনসভার প্রচারে রাজধানীতে মাইকিংয়ের অনুমতি দেয়নি। তারপরও মানুষ জনসভায় যোগ দিতে উদগ্রীব হয়ে আছে। আমাদের প্রত্যাশা আজকের জনসভা স্মরণকালের সবচেয়ে বড় আকার ধারণ করবে। তিনি জনসভার নিরাপত্তা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। সেই সঙ্গে জনসভায় আগত নেতাকর্মী, সমর্থকসহ সাধারণ মানুষকে শান্ত ও সুশৃঙ্খল থাকারও আহ্বান জানান। সাদেক হোসেন খোকা বলেন, দুপুর আড়াইটা থেকে বিএনপি, চারদলীয় জোট ও সমমনা দলের অংশগ্রহণে নয়াপল্টনে জনসভা শুরু হবে। নয়াপল্টনে জনসভার কারণে আজ রাজধানীতে যে অনাকাঙ্ক্ষিত যানজটের সৃষ্টি হবে তার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে। কারণ সরকার ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পল্টনে জনসভা করার অনুমতি না দিয়ে বিএনপিকে রাজপথে নামিয়েছে। দেশবাসী ভাবতেই পারছে না একাধিকবার ক্ষমতায় থাকা দল বিএনপি সভা-সমাবেশের জন্য রাজধানীতে একটি মাঠের অনুমতি পাবে না- এটা সরকারের স্বৈরাচারী একদলীয় মনোভাবের পরিচয়। গণতান্ত্রিক দেশে যা কখনওই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি বলেন, পোস্টার লাগাতে গেলে পুলিশ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। লিফলেট বিতরণে বাধা দিচ্ছে। এমনকি মাইকিংয়ের অনুমতিও দেয়নি। এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ন্যক্কারজনক সিদ্ধান্ত বলে বিএনপি মনে করে। সাদেক হোসেন খোকা বলেন, এ সরকারের আমলেই দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পুলিশ নির্যাতন করে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবীকে হত্যা করেছে। হরতালে একজন সাধারণ মানুষের গলা বুট দিয়ে চেপে ধরেছে পুলিশ। দেশের ইতিহাসে কোন সামরিক সরকার যা করেনি সে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বর্তমান সরকার হরতালে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে নিরপরাধ মানুষকে শাস্তি দিচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলেই দেশে খুন-গুমের মাত্রা বেড়ে যায়। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম হরতালেও বিমান শ্রমিক নেতা নূর হোসেনকে গুম করার পর এখন পর্যন্ত তার কোন খোঁজ মেলেনি। একই ভাবে বর্তমান সরকার আমাদের জনপ্রিয় ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমকে গুম করার পর তার লাশ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ঢাকার মেয়র বলেন, সরকারি দলের নেতাকর্মীরা পুলিশের সহায়তায় রাজপথে নর্তন-কুর্দন করছে। তারা মনে করছে তারাই দেশের সবকিছু। কিন্তু তাদের এ ধারণা ভুল। বেশি বাড়াবাড়ি হলে জনগণই এর প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তিনি বলেন, রাজপথে সরকারি দলের উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীদের নর্তন-কুর্দনে সহায়তা ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের দমন করা পুলিশ ও র‌্যাব-এর কাজ নয়। জনগণ এজন্য তাদের বেতনের টাকা যোগায় না। সাংবিধানিক দায়িত্ব অনুযায়ী তারা কাজ করবেন- এটাই বিএনপি প্রত্যাশা করে। তিনি বলেন, এ সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। কোন একটি খাতেই বর্তমান সরকারের সফলতা নেই। পররাষ্ট্রনীতিতে সরকারের ব্যর্থতা ও অযোগ্যতার কারণে মনমোহনের সফর ব্যর্থ হয়েছে। সেখানে আমাদের স্বার্থহানির পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে একটি ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, এতে দ্রব্যমূল্য বাড়বে, জনগণ আরও নিষ্পেষিত হবে। শেয়ার বাজারের মানুষকে নিঃস্ব করেছে সরকার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩৫০ লোককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে অবৈধভাবে। বিএনপি সরকারের এমন আচরণে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারে না। তিনি পথে পথে সরকারি দলের বাধা-বিপত্তির আশঙ্কা করে বলেন, আওয়ামী লীগের চরিত্র হচ্ছে প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি। তারা পথে অযথা ফ্যাসাদ কিংবা পাতানো পরিবহন ধর্মঘট ডেকে আমাদের জনসভাকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করতে পারে। জনসভা পণ্ডের কোন আশঙ্কা করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত কোন আশঙ্কা করছি না। তবে সে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে জনগণই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তারপরও আমরা আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছি। এটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার এবং তাদের দায়িত্ব। তবে আমরা চারদিক থেকে যে খবর পাচ্ছি তাতে ধারণা করা যায়, জনসভার ব্যাপ্তি হবে কাকরাইল থেকে নটরডেম কলেজ- জিরোপয়েন্ট থেকে শান্তিনগর। এত বিশাল সমাবেশের জন্য আমরা হয়তো সার্বিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবো না। তবে জনগণ নিজ দায়িত্বে সমাবেশ সফল করবে। মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক গণমাধ্যমের উদ্দেশে বলেন, আপনারা শুধু জনসভার সংবাদই সংগ্রহ করবেন না। জনসভার সার্বিক সংবাদ প্রচার করবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। বিশেষ করে বেসরকারি টেলিভিশনগুলোকে জনসভার লাইভ সমপ্রচার করার অনুরোধ জানাচ্ছি- যাতে বিরোধীদলীয় নেত্রীর বক্তব্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষজনও দেখতে এবং শুনতে পারেন। এ সময় দলের যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিমউদ্দিন আলম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু এমপিসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াতও তাদের এক লাখ কর্মী সমাবেশে যোগ দেবে বলে জানিয়েছে। জনসভাকে সফল করার জন্য বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতারা একাধিক যৌথসভা করেছেন। বৈঠক করেছেন চারদলের নেতারাও।  জনসভা থেকে সারপ্রাইজ কর্মসূচি ঘোষণার ইঙ্গিত দিয়েছেন চারদলের নেতারা। উল্লেখ্য, বর্তমান সরকারের আমলে চারদলের এটিই প্রথম জনসভা। সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট এ জনসভা করছে।  ঢাকা মহানগরসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও একাধিক প্রস্তুতি এবং যৌথসভা করেছে। যে কোন মূল্যে তারা সমাবেশকে সফল করতে চায়। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার মেয়র ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা বলেছেন, যত বিপত্তিই আসুক জনসভা হবে স্মরণকালের বিশাল। এর ব্যপ্তি হতে পারে নটর ডেম কলেজ থেকে কাকরাইল, জিরোপয়েন্ট থেকে শান্তিনগর। এ জন্য যে অনাকাঙ্ক্ষিত যানজটের সৃষ্টি হবে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে। কারণ বিএনপির মতো একটি বড় দলকে পল্টন মাঠে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। খালেদা জিয়ার আজকের বক্তব্যে হতে পারে পয়েন্ট টু পয়েন্ট। আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, দিনক্ষণ ঠিক করে গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয় না। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিএনপি আন্দোলনের মধ্যেই আছে। তবে এ আন্দোলনের মাত্রা এখন থেকে বাড়তে থাকবে। নেতারা বলেন, আজকের জনসভায় দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে বড় কোন কর্মসূচি ঘোষণার সম্ভাবনা নেই।  জানা গেছে, খালেদা জিয়া বেশ কিছু কর্মসূচি ঘোষণার অঙ্গীকার করবেন। সেসব কর্মসূচিতে জনগণের সমর্থনও যাচাই করবেন
চারদলের আজকের জনসভা নিয়ে টানটান উত্তেজনা চারদিকে। এরই মধ্যে কয়েক লাখ মানুষ জমায়েতের প্রস্তুতি নিয়েছে চারদল। পল্টন ময়দানে জনসভার অনুমতি না পাওয়ার বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তারা।