যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্যই বিরোধী দলের নেতা রোড মার্চ কর্মসূচি দিয়েছেন দাবি করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরোধীদলীয় নেত্রীর সিলেটের জনসভায় দেওয়া বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, তিনি যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য মাঠে নেমেছেন। দেশবাসীর অন্তরের দাবি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই।
তিনি গতকাল বুধবার বিকালে নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সরকারি হাইস্কুল মাঠে আয়োজিত জনসভায় এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর খালেদা জিয়ার দুই ছেলে কোকো ও তারেক হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করে বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে। চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে লুটপাট ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। এখন খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে রোডমার্চ শুরু করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর ধর্ম কি- বিরোধী দলের নেতার এমন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলের নেতা প্রশ্ন রেখেছেন আমি মুসলমান কিনা? আমি ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ি। কোরান তেলাওয়াতের মাধ্যমে আমার দিন শুরু করি। আমার প্রশ্ন, উনি ঘুম থেকে ওঠেন কয়টায়? উনি তো দুপুর ১২টায় ঘুম থেকে ওঠেন। সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধান সংশোধন করে আমরা সকল ধর্মের, সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে সমতা নিয়ে এসেছি। আমরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য কৃষি খাতে ভর্তুকি বাড়িয়ে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে দেশের জনগণের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করে। আমরা প্রথম শ্রেণী থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত মেয়েদের বিনা বেতনে লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছি। অসহায়-দুস্থ মানুষের জন্য ভিজিডি-ভিজিএফ-বিধবাভাতা ও বয়স্কভাতা চালু করেছি। প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করেছি। যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে দেশে প্রায় ৪০ হাজার বেকার যুবকের স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচন না করার ধুয়া তুলে বাংলাদেশের মানুষের শান্তি ভঙ্গ করে চলেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিনিও চাননি। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে রোডমার্চ শুরু করেছেন। বর্তমান মহাজোট সরকার দেশের উন্নয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছে।
আগামী ২০১৪ সালে নিরক্ষর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে চলেছে। শেখ হাসিনা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে লাভ হবে না। গণতান্ত্রিক সরকারের মাধ্যমেই নির্বাচন হবে।
কৃষকদের সহায়তা দেয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি ভর্তুকির টাকা উত্তোলনে মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে কৃষকরা প্রতারিত না হয়। দেশকে খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণ করার উদ্যোগ নিয়ে বর্তমান সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার সময় ভাঙা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি রেখে গেলেও বর্তমানে তিনি (খালেদা জিয়া) এবং তার পুত্ররা কোটি কোটি টাকার মালিক হলেন কেমন করে? এ সবই দেশের গরিব ও শ্রমজীবী মানুষের ঘাম ঝরানো অর্থ।
নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহম্মেদের সভাপতিত্বে এ জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, ভূমি প্রতিমন্ত্রী মোস্তাফিজার রহমান ফিজার, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সতীশ চন্দ্র রায় এমপি, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ, আসাদুজ্জামান নুর এমপি, মারুফ সাকলাইন এমপি, ড. হামিদা বানু শোভা এমপি প্রমুখ।