বাংলাদেশে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে আটকের পর নিখোঁজ বা গুম হওয়ার ঘটনা বাড়ছে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
বিভিন্ন পরিবারের পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযোগের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তাতে অবিলম্বে এই বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর উদ্যোগ না নেয়া হলে পরিস্থিতি হয়তো বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে বলে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান বা র্যাবের বিরুদ্ধে এধরনের অভিযোগ থাকলেও র্যাব কর্মকর্তারা তা অস্বীকার করেছেন।
এক বছর আগে অক্টোবর মাসে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় সেনা আবাসন প্রকল্পের জমি কেনা নিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে র্যাব-পুলিশের কয়েক দফা সংঘর্ষের পর থেকে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন তিন ব্যক্তি। সেসময় নিহত একজনের ছবিও বাংলাদেশের সংবাদপত্রে ছাপা হয়। ঐ ঘটনায় নিখোঁজ ইছাপুর গ্রামের মুদি দোকানদার মাসুদুর রহমানের পরিবার অভিযোগ করেছিল সংঘর্ষের সময় সেনা ক্যাম্প থেকে ছোঁড়া গুলিতে আহত মি. রহমানকে র্যাব তুলে নিয়ে যায়। এরপর তার লাশ আজও পাওয়া যায়নি বলে জানান মাসুদুর রহমানের স্ত্রী কোহিনুর বেগম। এ বিষয়ে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার এম. সোহায়েলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি এসব অভিযোগ নাকচ করেন।

বিভিন্ন অপরাধী গোষ্ঠি নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের দায়ভার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর চাপাতে এ ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে বলে র্যাবের এই কর্মকর্তা দাবি করলেও সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু ঘটনার খবর পত্র-পত্রিকার খবরে উঠে আসছে। গত বছর চৌধুরী আলম নামে বিএনপির একজন ওয়ার্ড কমিশনার এবং গত মাসে আতাউর রহমান লিটু নামে আরেকজন ওয়ার্ড কমিশনার নিখোঁজ হন। তাদের পরিবারের অভিযোগ, র্যাব পরিচয় দিয়ে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
রাজধানীর দেওয়ানগঞ্জ এলাকায় একইভাবে দুই ভাইয়ের নিখোঁজ হওয়ার পর অভিযোগের আঙুল তুলে ধরা হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের দিকে। এধরনের ঘটনার সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। মানবাধিকার সংগঠন অধিকার রোববার যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে জানুয়ারি থেকে গত নয় মাসে মোট ১৭ জনকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে এবং এরা সবাই এখনও নিখোঁজ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার এসব ঘটনার পেছনে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে অধিকারের উপদেষ্টা ফরহাদ মজহার এসব বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে তাগিদ দিয়েছেন।