তাঁর জাদু গিটার

bnn24

Bybnn24

জুলা ১২, ২০১২

এ দেশের রকসঙ্গীতে জাদুকর এক গিটারশিল্পী গায়ক আইয়ুব বাচ্চু। তিনি গিটার বাজালে শ্রোতা-দর্শক মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে থাকে। এলআরবি ব্যান্ডের এই দলনেতার মনেপ্রাণে, চোখে-মুখে তারুণ্যের স্ফুলিঙ্গ। তাকে নিয়ে লিখেছেন শিমুল আহমেদ
রাজধানীর বেইলি রোডে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের [ডিএফপি] মূল ফটকে তখন মানুষের আনাগোনা কম রোদের প্রখরতার কারণে। গেটের এক কোণে নিরাপত্তাকর্মী। হঠাৎ আসা একটি গাড়ির হর্ন বাজলো। গাড়ির ভেতরের মানুষকে দেখেই নিরাপত্তাকর্মীর মুখে হাসি। গাড়ি থেকে কালো প্যান্ট ও কালো জুতার ওপর সাদা ফিতা লাগানো একটি পা বেরিয়ে আসে। খানিক বাদেই মাথায় কালো টুপি ও গায়ে নীল-সাদা চেক শার্ট পরে গাড়ি থেকে নেমে এলেন আইয়ুব বাচ্চু। ছোটাছুটি করে অনেকেই এগিয়ে এলো গাড়ির সামনে। অন্যদের দৃষ্টিও সেদিকে। হেঁটে যেতে যেতে কয়েকজন ভক্তের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পর রকসঙ্গীতের এই তারকা হলরুমের গেটে পেঁৗছানোর পর দরজার আড়ালে দাঁড়ালেন। ভেতরে চলছে যন্ত্রশিল্পীদের অনুশীলন। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে বাজনা শোনার পর সামনে গেলেন তিনি। থেমে গেল শব্দ। একটু হেসে জানালেন, ‘বেশ ভালোই তো, থামলে কেন?’ জানা গেলো, প্রায়ই তিনি দরজার আড়াল থেকে যন্ত্রশিল্পীদের বাজানো উপভোগ করে থাকেন। এখানে চলছে আরটিভির ‘আর মিউজিক’ অনুষ্ঠানের চিত্রায়ন। মঞ্চে নিজের একটি স্থিরচিত্রে গিটার হাতে দাঁড়িয়ে আইয়ুব বাচ্চু, সামনে দুটি চেয়ার। গিটার কাঁধে নিয়ে চেয়ারে বসেই তিনি শুরু করেন জাদু! আইয়ুব বাচ্চু আর গিটার যেন দুইয়ে মিলে একাকার। বিভিন্ন ধরনের গিটার সংগ্রহ করা আইয়ুব বাচ্চুর একটি শখ। তাই তো তিনি বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের গিটার সংগ্রহ করেছেন। গিটারের একটি সংগ্রহশালা আছে তাঁর। আইয়ুব বাচ্চুর স্বপ্নগুলো যেন গিটারের টুংটাং শব্দে বেজে ওঠে, নিজের কষ্টগুলোও যেন তিনি ভুলে যান গিটারের সুরে। গত কিছুদিন তাকে এখানে আসতে হচ্ছে। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ‘আর মিউজিক’ সঞ্চালনা করছেন এলআরবি ব্যান্ডের এই দলনেতা। একসময় গিটার থামিয়ে তিনি বাইরে বেরিয়ে এলেন। ছবি তোলার ফাঁকে কথা হচ্ছিল। নিজের ব্যান্ডের নতুন অ্যালবাম ‘যুদ্ধ’ এখন প্রকাশের অপেক্ষায়। ‘অনেক আগেই অ্যালবামটির কাজ শুরু করেছিলাম। প্রকাশ হচ্ছে হচ্ছে বলেও এখনও এটি বের হয়নি। কিন্তু এ বছরই শ্রোতারা হাতে পাবে অ্যালবামটি।’ প্রকাশনার উপলক্ষ্য কি আগামী রোজার ঈদ? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখন কিছু বলতে চাই না। কারণ কয়েকবার প্রকাশের সময় চূড়ান্ত করেছিলাম। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তাই এবার শুধু প্রকাশের আগের দিন ঘটা করে সবাইকে জানাব। তবে এটুকু বলতে পারি, এ বছরই তা প্রকাশ করছি। এতদিন পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আটকে ছিল অ্যালবামটি।’ রোদচশমা পরে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বাচ্চু বলেন, ‘কি, মানিয়েছে? নাকি অন্য একটি রোদচশমা পরব?’ আলোকচিত্রী ক্লিক করার পর দেখতে চাইলেন কেমন হয়েছে স্থিরচিত্রটি। আরও কয়েকটি ছবির জন্য দেয়ালের পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালেন। এরপর অন্য একটি রোদচশমা পরে আবারও নন্দনের ক্যামেরার সামনে হাজির হন তিনি। কথার পিঠে কথায় জানা হলো তাঁর এখনকার ব্যস্ততা। “আমার পছন্দের একটি অনুষ্ঠান আর মিউজিক’। ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে প্রথম এ অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করি। কিন্তু এক বছরের মাথায় কাজের ব্যস্ততার কারণে কাজটা বন্ধ করে দিতে হয় আমাকে। গত জুনে আবারও অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার সিদ্ধান্ত নিই। অনুষ্ঠানটি ব্যাপক জনপ্রিয়, দর্শক-শ্রোতাও অনুষ্ঠানটি প্রচারের জন্য অনুরোধ করেছিল আরটিভিকে। সব ভেবে আবারও এ অনুষ্ঠানে ফিরে আসি। আগের অনুষ্ঠানে শুধু জ্যেষ্ঠ শিল্পীরা উপস্থিত থাকতেন। তবে এবার তাদের পাশাপাশি নবীনদেরও অংশগ্রহণ থাকছে। এবার অনুষ্ঠানে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন মূলত কনসার্ট আর এ অনুষ্ঠানের অনুশীলন নিয়েই ব্যস্ত আছি।’
কয়েক মাস আগে কলকাতার দেবাদিত্য পরিচালিত ‘৮.০৮ বঙ্গ লোকাল’ চলচ্চিত্রের একটি গানে তবলাশিল্পী তন্ময় বোসের গেয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু। ছবিটি মুক্তি পেয়ে প্রশংসিত হয়েছে ওপার বাংলায়। এদিকে কয়েকদিন আগে ঢাকায় প্রকাশ হলো রেদওয়ান রনি পরিচালিত ‘চোরাবালি’ ছবির গানের অ্যালবাম। এতে সাজ্জাদ হুসাইনের লেখা ও নিজের সুরে ‘কেয়ারলেস কেয়ারলেস’ শিরোনামের একটি গান গেয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু। এ ছাড়া সম্প্রতি মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘টেলিভিশন’ চলচ্চিত্রের জন্য একটি গান সুর করেছেন। ছবিটির আবহসঙ্গীতের কাজও করছেন তিনি। গানটির দুটি পৃথক সংস্করণে কণ্ঠ দিয়েছেন ন্যান্সি ও লুৎফর হাসান। ‘ভাবনা’ শিরোনামের গানটি লিখেছেন কবির বকুল। আইয়ুব বাচ্চু জানান, “প্রায় ১০ বছর আগে ফারুকীর ‘ব্যাচেলর’ ছবির জন্য গান তৈরি করেছিলাম। ওই ছবির ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি’ [মারজুক রাসেলের লেখা] গানটি জনপ্রিয় হয়। সম্প্রতি ফারুকীর ‘টেলিভিশন’ ছবির গল্প শুনে বেশ ভালো লেগেছে। তাই এ ছবিতে গান করার জন্য রাজি হই। আর ন্যান্সিকে নিয়ে এর আগে বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করলেও এবারই ছবির জন্য কাজ করলাম।”
কথায় কথায় বেলা বাড়ছে। এদিক-সেদিক তাকিয়ে আইয়ুব বাচ্চু একটু ছায়ার খোঁজ করছেন। এমন সময় চোখে আটকাল একটি পেয়ারা গাছ। গাছে কয়েকটি পেয়ারাও ঝুলছে। ওই গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়ালেন। ‘আর মিউজিক’-এর কাজে যোগ দেওয়ার ডাক এসেছে। এই ভেবে বিদায় নেওয়ার অপেক্ষায় গিটারের জাদুকর। ২০১০ সালে ফাহিম মিউজিক থেকে প্রকাশ হয় তাঁর সুর ও সঙ্গীতে পূর্ণাঙ্গ মিশ্র অ্যালবাম ‘অনুভবে’। নবীন শিল্পীদের পাশাপাশি এ অ্যালবামে আইয়ুব বাচ্চুও গেয়েছেন। এর আগের বছর প্রকাশ হয় প্রেমের গান নিয়ে তার একক ‘বলিনি কখনো’। নবীন শিল্পীদের নিয়ে আর কোনো অ্যালবাম প্রকাশের ইচ্ছা আছে? ‘না, আপাতত নেই। অডিও বাজারে যে অবস্থা তা ভেবেই হতাশ। কারও যেন এতে মাথাব্যথা নেই। পাইরেসি দিন দিন প্রকট রূপ নিচ্ছে। এ কারণে জনপ্রিয় শিল্পীরা নতুন অ্যালবাম প্রকাশের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। শ্রোতারাও পাচ্ছে না প্রিয় শিল্পীর নতুন গান। বর্তমান অডিও বাজারের অবস্থাকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছেন শৌখিন গায়ক-গায়িকারা। তারা নিজেদের টাকায় অ্যালবাম তৈরি করে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে তুলে দিচ্ছেন। এটা অনুচিত। সবাইকেই এই শিল্পের প্রতি যত্নবান হতে হবে। তাহলে আবারও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে অডিও শিল্প।